
হা-ডু-ডু খেলা একটি প্রসিদ্ধ বাংলাদেশী গোলযাত্রা খেলা। এই খেলাটি মূলত পৌষ মাসের শেষ পর্যন্ত খেলা হয়। খেলাটি দুটি দলে খেলা হয়। প্রতিদিন সকালে দুটি দলের জন্য হাড় ও সুচি নির্ধারণ করা হয়। খেলার দিন এলে প্রথমে একটি দল আরেকটি দলকে দাঁড়িয়ে ওঠায়। তারপর দুটি দল হাত মিলিয়ে রাখতে হয়। এরপর মুখোমুখি দুটি দলের হাড়-সুচি একটার পাশে অবস্থিত হয়।
খেলা শুরুর সময় প্রথমে দুটি দলের হাড়-সুচি উঠিয়ে নেয়া হয়। এরপর দুটি দল হাত মিলিয়ে রাখতে হয় এবং আরেকটি দলকে হাড়-সুচি ফেলতে হয়। যে দলের হাড়-সুচি ফেলা হয়, তারা লড়াই হারিয়ে যায়। তবে লড়াই জিততে হলে হাড়-সুচি উঠানোর সময় হাত ছেড়ে দিতে হবে না এবং হাড়-সুচি ফেলতে হবে তারপর হাত মিলিয়ে রাখতে হবে। খেলাটি খুবই জনপ্রিয় এবং একটি সম্পূর্ণ আধুনিক বাংলাদেশী গোলযাত্রা খেলা।
হা-ডু-ডু খেলা
অথবা
বাংলাদেশের একটি খেলা
ভূমিকা :
খেলাধূলা আমাদের দৈহিক শক্তি বৃদ্ধি করে, অলসতা দূর করে এবং মনে প্রফুল্পতা আনয়ন করে। পূর্বকাল থেকেই আমাদের দেশে নানা প্রকার খেলাধূলা চলে আসছে। ঐ সকল খেলা ব্যতীত কতকগুলি বিদেশী খেলারও এদেশে প্রচলন হয়েছে। বাংলাদেশের খেলাগুলির মধ্যে দারিয়েবাধা, কাবাডি বা হা-ডু-ডু, ফুটবল, গোল্লাছুট, ক্রিকেট প্রভৃতি খেলা বিশেষ প্রচলিত। এই সকল খেলার মধ্যে আবার হা-ডু-ডু ও ফুটবলই অধিক প্রচলিত ও জনপ্রিয়। হা-ডু-ডু দেশীয় খেলা, এর সম্বন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।
হা-ডু-ডু : হা-ডু-ডু বা কাবাডি খেলা বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সর্বাধিক প্রচলিত। ইহা খাঁটি দেশীয় খেলা। ইহাতে কোন বায় নাই এবং ছোট বড় সকলেই খেলিতে পারে। প্রায়ই বৈকালবেলা সর্বত্র যুবকগণ এই খেলা খেলিয়া থাকে।
হা-ডু-ডু খেলার নিয়মঃ
হা-ডু-ডু খেলোয়াড়রা দুই দলে বিভক্ত হয়ে খেলে। খেলোয়াড়দের সংখ্যার কোন নির্ধারিত সীমা নেই। এক এক পক্ষে ছয় থেকে এগার জন পর্যন্ত খেলোয়াড় খেলায় অংশগ্রহণ করতে পারে; তবে লক্ষ্য রাখতে হয়, উভয় পক্ষের খেলোয়াড়দের বয়স ও শক্তিতে সমসাময়িক কিনা। উভয় দলের মধ্যে অধিক বৈষম্য থাকলে খেলা একতরফা হয়ে পড়ে।
খেলার মাঠে দুই দলের মধ্যে একটা রেখা টানা হয়। ওর দুই পাশে খেলোয়াড়রা অর্ধচক্রাকারে দণ্ডায়মান হয়। বলিষ্ঠ ও দক্ষ খেলোয়াড়দের একটু বেশি অগ্রগামী থাকে। এইভাবে চক্র প্রস্তুত হলে এক পক্ষের একজন খেলোয়াড় নিঃশ্বাস বন্ধ করে ডু-ডু অথবা কাবাডি’ বা অন্য কোন ধ্বন্যাত্মক পদ্ধতি উচ্চারণ করতে করতে অন্য দলের খেলোয়াড়কে স্পর্শ করে আসার চেষ্টা করে। সে দফ অক্ষুণ্ণ রেখে যাকে বা যাদেরকে স্পর্শ করবে, সে বা তারা ‘মারা’ পড়বে। কিন্তু বিপক্ষকে সদা সতর্ক থাকতে হয় যেন, কাকেও স্পর্শ করতে না পারে। স্বয়ং খেলোয়াড়কে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়, যেন বিপক্ষের খেলোয়াড়রা তাকে ধরে নিজেদের ঘরে আটকাতে না পারে। বিপক্ষ যদি তাকে আপনাদের সীমানার মধ্যে আটকিয়ে রাখতে পারে তবে সে ‘মাৱা’ পড়বে, কিন্তু মুখে বুলি থাকাকালীন যদি নিজের ঘরে ছুটে আসতে পারে, তবে সে মারা পড়বে না, উপরন্তু বিপক্ষের খেলোয়াড় বা খেলোয়াড়রা মারা পড়বে। যে মারা পড়বে তাকে নির্দিষ্ট রেখার বাইরে এসে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকতে হবে। একপক্ষের একজন মারা পড়লে অন্য পক্ষের একজন বেঁচে উঠবে। এইভাবে ক্রমাগত খেলা চলতে থাকে। অবশেষে একপক্ষের সকলেই মারা পড়লে, খেলা সমাপ্ত হয়ে যায়। যে পক্ষের সকল খেলোয়াড়ই মারা পড়বে, সে পক্ষের হার এবং অন্যপক্ষের জিত হয়, এইভাবে খেলার মীমাংসা হয়।
হা-ডু-ডু খেলার জনপ্রিয়তা :
বাংলাদেশের সর্বত্রই হা-ডু-ডু খেলা বিশেষ জনপ্রিয়। একে আমরা বাংলাদেশের জনপ্রিয় জাতীয় খেলা বলে অভিহিত করতে পারি। ভারত ও পাকিস্তানেও হা-ডু-ডু খেলা বেশ জনপ্রিয়। পাঞ্জাবে, কুত্তির পরেই এর স্থান। সিন্ধু ও সীমান্ত অঞ্চলে কাবাডি খেলার বিশেষ প্রচলন আছে। লাহোরে প্রতি বছর কাবাডি খেলার প্রতিযোগিতা হয়; অসংখ্য দর্শক আনন্দের সাথে এই খেলা উপভোগ করে। শুনা যায় গামা, ভুলু, হামিদ প্রমুখ পাঞ্জাবের বিখ্যাত পাহলোয়ানদের এ একটি প্রিয় খেলা। দীর্ঘ ও বলিষ্ঠকায় এই পাহলোয়ানদের যখন বিরাট বপু নিয়ে কাবাডি খেলা শুরু করে এবং শারীরিক শক্তির কৌশল দ্বারা উভয় পক্ষের তুমুল প্রতিযোগিতা হয় তখন সেই দৃশ্য পরম উপভোগ্য হয়ে থাকে।
হা-ডু-ডু খেলার উপকারিতা :
হা-ডু-ডু খেলায় শরীরের সর্বাঙ্গের ব্যায়াম হয়। এতে ফুসফুসের ক্রিয়া ভাল হয়। এতে প্রচুর শক্তি ও দমের প্রয়োজন। যতক্ষণ দম থাকবে, ততক্ষণ একটি খেলোয়াড়ের আক্রমণ শক্তি ও আপনার সঙ্গ সজীব থাকে। হা-ডু-ডু খেলোয়াড়দের মধ্যে বিপুল আনন্দের সৃষ্টি হয়। এতে দর্শকদের মধ্যেও প্রচুর আনন্দ ও উত্তেজনার তার জাগে। বিনা ব্যয়ে এত আনন্দদায়ক ও উপকারী খেলা আর নেই। আমাদের দরিদ্র দেশের পক্ষে এই খেলা বড়ই উপযোগী।
হা-ডু-ডু খেলার অপকারিতা :
হা-ডু-ডু খেলায় কেবল যে উপকারই হয় তা নয়, এতে বিপদের সম্ভাবনাও আছে। কয়েকজনের একত্র জড়াজড়িতে বা কারও আকস্মিক পতনে যে-কোন খেলোয়াড় হঠাৎ আঘাতপ্রাপ্ত হতে পারে। খেলা সমাপ্তির পর দেখা যায় প্রায় খেলোয়াড়েরই শরীরের কোন না কোন অংশের চামড়া থেঁতলে গেছে।
উপসংহার :
বিনা ব্যয়ে বা সামান্য ব্যয়ে কাবাডি খেলার মত এমন সুন্দর শক্তিবর্ধক ও আনন্দদায়ক খেলা আর নেই। শক্তি, সাহস ও বীর্যবতা প্রকাশের পূর্ণ সুযোগ দান করে বলে কাবাড়ি খেলায় সকলেরই অংশগ্রহণ করা উচিত। ছোট বড় সকলেই এতে সামিল হতে পারে। এমন চমৎকার ও উৎকৃষ্ট খেলাটি যাতে অব্যাহতভার সর্বত্র প্রচলিত হয় এবং অধিক জনপ্রিয়তা লাভ করে সেদিকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের লক্ষ্য রাখা উচিত।
FAQ:
হা-ডু-ডু খেলা সম্পর্কে কিছু জানতে চাইলে নিম্নোক্ত প্রশ্ন উত্তরগুলি দেখতে পারেন:
প্রশ্নঃ হা-ডু-ডু খেলা কোন দেশের খেলা?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলা বাংলাদেশের একটি প্রসিদ্ধ গোলযাত্রা খেলা।
প্রশ্নঃ এই খেলাটি কত সময় খেলা হয়?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলা পৌষ মাসের শেষ পর্যন্ত খেলা হয়।
প্রশ্নঃ হা-ডু-ডু খেলা কেমন খেলা?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলা দুটি দলে খেলা হয়। দুটি দলের জন্য হাড় ও সুচি নির্ধারণ করা হয়। খেলা শুরুর সময় প্রথমে দুটি দলের হাড়-সুচি উঠিয়ে নেয়া হয়। এরপর দুটি দল হাত মিলিয়ে রাখতে হয় এবং আরেকটি দলকে হাড়-সুচি ফেলতে হয়।
প্রশ্নঃ হাড়-সুচি ফেলা কেন গোলযাত্রা হয়?
উত্তরঃ হাড়-সুচি ফেলা হলে খেলাটি গোলযাত্রা হয় এবং যে দলের হাড়-সুচি ফেলা হয়, তারা লড়াই হারিয়ে যায়।
প্রশ্নঃ হা-ডু-ডু খেলাটি কে খেলতে পারে?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলাটি যে কেউ খেলতে পারে, এর জন্য কোন বিশেষ কৌশল প্রয়োজন নেই।
প্রশ্নঃ হা-ডু-ডু খেলাটির ইতিহাস কী?
উত্তরঃ হা ডু ডু হল ভারতবর্ষের একটি প্রাচীন খেলা। এটি দুই দলের মধ্যে খেলা হয় এবং একটি গোল দিকে থেকে অপরটি গোলে বলটি ঠেলে নিতে হয়। প্রথমে এই খেলা শুরু হল পশ্চিমবঙ্গে এবং তারপর সমস্ত ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়ল। এটি বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ, অসম, ওড়িশা এবং ত্রিপুরা এলাকাগুলোতে খেলা হয়।খেলাটির উৎস ভারতীয় মিথক থেকে পাওয়া গেছে। একটি মিথক বলা হয় যে খেলাটি রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের সময় শুরু হয়েছিল।
এই খেলাটি এখনও পশ্চিমবঙ্গ, অসম এবং ওড়িশা এলাকাগুলোতে খুব জনপ্রিয় এবং খেলাধূলার একটি উপাদান হিসাবে প্রবর্তন করা হয়।
প্রশ্নঃ হা-ডু-ডু খেলাটি কিভাবে প্রচারিত হয়েছে?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলা বাংলাদেশের একটি প্রচুরপক্ষে খেলা হয়। এই খেলাটি স্কুল, কলেজ, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন উদ্দেশ্যে অনেকগুলি স্থানে খেলা হয়।
প্রশ্নঃ. হা-ডু-ডু খেলাটি খেলার মান কিভাবে নির্ধারিত হয়?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলাটি নির্ধারিত হয় একটি ব্যবস্থাপনা কর্তৃক। খেলার দিন এলে হাড় ও সুচি আলাদা করে দুটি দলে বিতরণ করা হয়।
প্রশ্নঃ. হা-ডু-ডু খেলাটির উদ্দেশ্য কী?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলাটির মূল উদ্দেশ্য হল মনো ও দেহ উন্নয়ন করা।
প্রশ্নঃ. হা-ডু-ডু খেলাটি খেলতে কি ফায়দা পাওয়া যায়?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলাটি খেলতে মানসিক এবং শারীরিক উন্নয়ন হয়। এটি সমস্যার সমাধানে ও তন্দুরস্থ থাকার জন্য উপযোগী। এছাড়াও এটি খেলে স্বাস্থ্যকর হয় এবং মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়ন করে।
প্রশ্নঃ হা-ডু-ডু খেলাটি অন্য কোন খেলার মতো?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলাটি একটি মোটর স্পোর্টস খেলা হিসাবে গণ্য হতে পারে। এটি ফুটবল, হকি এবং ক্রিকেটের মতো খেলার মধ্যে দল বন্ধুত্ব এবং ফিজিক্যাল ফিটনেস উন্নয়নের একটি উপাদান হিসাবে বিবেচিত হতে পারে।
এই খেলাটি ফুটবলের মতো দুই দল মধ্যে খেলা হয় এবং প্রতিদ্বন্দ্বী দলের গোল করতে হয়। তবে হা-ডু-ডু খেলাটি ফুটবলের থেকে কিছুটা ভিন্ন এবং এর খেলার নির্দেশাবলী ও প্রক্রিয়া তারপরিভাষিত।
অন্যদিকে, হকি এবং ক্রিকেটের মতো, হা-ডু-ডু খেলা খেলাধুলার সময় ব্যবহৃত উপকরণগুলির ধরণ ও খেলার ফিজিক্যাল বৈশিষ্ট্যে ভিন্ন হতে পারে।
প্রশ্নঃ হা ডু ডু খেলার কোটের মাপ কত?
উত্তরঃ হা ডু ডু খেলার কোটের মাপ হল 22 গন্তা ৭৬ ফুট।