স্বামী বিবেকানন্দ (Swami Vivekananda); ১২ জানুয়ারি ১৮৬৩ – ৪ জুলাই ১৯০২) নাম নরেন্দ্রনাথ দত্ত , ছিলেন একজন হিন্দু সন্ন্যাসী, দার্শনিক, লেখক, সংগীতজ্ঞ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর ভারতীয় অতীন্দ্রিয়বাদী রামকৃষ্ণ পরমহংসের প্রধান শিষ্য। তার পূর্বাশ্রমের নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। ভারতে বিবেকানন্দকে ‘বীর সন্ন্যাসী’ নামে অভিহিত করা হয় এবং তার জন্মদিনটি ভারতে জাতীয় যুব দিবস হিসেবে পালিত হয়। এটিও পড়ুন – বইমেলা প্রবন্ধ রচনা 700 শব্দের মধ্যে
স্বামী বিবেকানন্দ প্রবন্ধ রচনা অনুসারে অনুরুপ প্রবন্ধ রচনা লেখা যাবে -স্বামী বিবেকানন্দ, বীর সন্ন্যাসী স্বামী বিবেকানন্দ, বীরেশ্বর বিবেকানন্দ, বিবেকানন্দ ও যুবসমাজ, মানবপ্রেমী বিবেকানন্দ, স্বামী বিবেকানন্দ – ভারতাত্মার প্রতীক ইত্যাদি।
স্বামী বিবেকানন্দ প্রবন্ধ রচনা
জন্মঃ
১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ জানুয়ারী কোলকাতার সিমলা পল্লির বিখ্যাত দত্ত পরিবারে বিবেকানন্দ জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম বিশ্বনাথ দত্ত, মাতা ভুবনেশ্বরী দেবী। অন্নপ্রাশনের সময় তাঁর নাম রাখা হয় নরেন্দ্রনাথ। যদিও তাঁর মা তাঁকে বীরেশ্বর বা বিলে বলে ডাকতেন।
বাল্যকাল ও পড়াশুনাঃ
বাল্যকালে নরেন্দ্রনাথ একদিকে যেমন ভীষণ দুষ্টু ছিলেন, তেমনি অত্যন্ত বুদ্ধিমান ও মেধাবী ছিলেন। নরেনের লেখাপড়া শুরু হয় মেট্রোপলিটান ইন্সটিটিউশনে। সেখান থেকে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পাস করে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন। তারপর জেনারেল অ্যাসেম্বলি ইন্সটিটিউশনে থেকে এফ.এ. এবং বি.এ. পাস করেন।
শরীরচর্চা ও খেলাধুলাঃ শরীরচর্চা ও খেলাধুলার প্রতি নরেনের বেশ আগ্রহ ছিল। ক্রিকেট খেলায় তাঁর বেশ সুনাম ছিল। এছাড়া তিনি নিয়মিত ব্যায়াম করতেন। সংগীতচর্চাতেও তাঁর দক্ষতার পরিচয় পাওয়া যায়।
ঈশ্বরচিন্তা ও শ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্যত্ব গ্রহণঃ
খুব ছোটোবেলা থেকেই নরেনের মনে ধর্মভাব ছিল। শিবনাম শুনলেই তিনি ছোটবেলায় আনমনা হয়ে পড়তেন। পরবর্তীকালে ‘ঈশ্বর কে’?—এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য তিনি বাহ্মবন্ধু কেশবচন্দ্র সেনের কাছে যান। কিন্তু এই জটিল প্রশ্নের উত্তর তিনি তাঁর কাছে পাননি। একদিন শ্রীরামকৃষ্ণের দেখা পেলেন; শ্রীরামকৃষ্ণের বাণীতে তাঁর মন ভরে গেল। তিনি তাঁর মধ্যেই খুঁজে পেলেন এক নতুন জীবন। ঈশ্বরের অস্তিত্ব তিনি জীবসেবার মাধ্যে খুঁজে পেলেন। তারপর একদিন নরেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণের কাছ থেকে দীক্ষা নিয়ে হয়ে গেলেন স্বামী বিবেকানন্দ।
শিকাগো মহাধর্ম সম্মেলনে যোগদানঃ
১৮৯৩ সালে বিশ্ব মহাধর্ম সম্মেলন আমেরিকার শিকাগো শহরে আয়োজিত হয়। সেখানে ডাক না পেয়েও ভারতের একমাত্র হিন্দু ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেকানন্দ সেখানে উপস্থিত হন। মাত্র পাঁচ মিনিটের বক্তব্যের প্রথমেই তিনি আমেরিকা বাসীদের ‘ভাই ও বোন’ বলে সম্বোধন করলে প্রবল হাততালিতে সেই সম্মেলন ফেটে পড়ে। তারপর তিনি হিন্দু ধর্মের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মানবধর্মের ছবি সমগ্র বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেন। শিকাগো ধর্ম সম্মেলনে তাঁর বক্তব্যের পরই ভারতবর্ষ বিশ্ববাসীর কাছে মর্যাদা পেতে শুরু করে।
সেবা ও দেশপ্রেমঃ
স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থভাবেই বুঝেছিলেন যে, ভারতের মূল জাতীয় সমস্যা হল জনসাধারণের চরম দারিদ্র ও অশিক্ষা। তিনি প্রথমেই দারিদ্র ও অশিক্ষা দূর করার উপায় খুঁজতে লাগলেন। তাঁর এই মহৎ কাজে ভগিনী নিবেদিতা এগিয়ে এলেন। এর প্রথম পদক্ষেপ তিনি ১৮৯৮ সালে বেলুড়ে রামকৃষ্ণ মিশন স্থাপন করেছিলেন। ধীরে ধীরে সারা দেশে তিনি রামকৃষ্ণ মিশনের কর্মকান্ড ছড়িয়ে দিলেন। মানব সেবাই শ্রেষ্ঠ সেবা, শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তাই তিনি—“জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর।”—এই মহান বাণীকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিলেন।
সাহিত্যকীর্তিঃ
স্বামী বিবেকানন্দের সাহিত্যে সেবাও ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁর রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ ও বক্তৃতাবলি হল রাজযোগ, ভক্তিযোগ, কর্মযোগ, প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য, বর্তমান ভারত, পরিব্রাজক প্রভৃতি।
যুবসমাজ ও বিবেকানন্দঃ দারিদ্রপীড়িত ভারতবর্ষকে স্বপ্নের ভারতবর্ষ গড়ে তোলার জন্য তিনি যুবশক্তির উপর বিশ্বাস করতেন। তিনি জাত পাত নির্বিশেষে সকল মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হতে বলেছিলেন। আর মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার দায়িত্ব দিয়াছিলেন যুবশক্তির উপর। যুবশক্তিকে তিনি বলেছিলেন—“তোমারা দেশপ্রেমিক হও, জাতিকে প্রাণের সঙ্গে ভালোবাসো। তোমরা বড়ো কাজ করবার জন্য জন্মেছ।” তিনি চরিত্রবান যুবকদল গড়ে তুলতে চেয়েছলেন। তাঁর আশা ছিল ছাত্র ও যুবকরাই ভারতকে স্বপ্নের ভারতবর্ষ বানাতে পারবে। তিনি যুব সমাজকে যৌবনের প্রতীক বলে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি নিজের দেশ ও যুবসমাজ সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।
উপসংহারঃ
এই আলোক সামান্য, জাতির মেরুদন্ড ভারত পথিক স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০২ সালের ৪ জুলাই পরলোকগমন করেন। “আমি ৪০ দেখব না”—এই কথা তিনি রেখেছিলেন। এই মহাপুরুষের অকালমৃত্যুতে ভারতবর্ষ যেন পিতৃহীন হয়ে পড়েছে। তাঁর বাণী শুধু ভারতবর্ষে নয়, সারা বিশ্ববাসীকে দারুনভাবে প্রভাবিত করেছিল। তিনি আক্ষরিক অর্থেই কর্মবীর ও ধর্মবীর ছিলেন। “যে ধর্ম গরীবের দুঃখ দূর করে না, মানুষকে দেবতা করে না, তা কি আবার ধর্ম?”—ধর্ম সম্পর্কে তাঁর সেই বিখ্যাত উক্তি আজও আমাদের ধর্মের উর্দ্ধে উঠতে সাহায্য করে। তাইতো তাঁকে শ্রদ্ধা ঞ্জাপন করে বলা হয়—
“বীর সন্ন্যাসী বিবেকানন্দ ঞ্জানের আলোক শিখা,
ভারত আত্মার মূর্তপ্রতীক বিশ্বপ্রেমের দিব্য লিখা।”
এটিও পড়ুন – উন্নয়ন বনাম পরিবেশ প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে