প্রবন্ধ রচনা

সাধারণ নির্বাচনে তরুণ সমাজের ভূমিকা প্রবন্ধ রচনা

সাধারণ নির্বাচনে তরুণ সমাজের ভূমিকাঃ এই পোষ্টে আঠারাে বছর বয়সের ভােটাধিকার প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল। সাধারণ নির্বাচনে তরুণ সমাজের প্রবন্ধ রচনা অনুসারে অনুরূপ-প্রবন্ধ লেখা যাবে – এ দেশের বুকে আঠারাে আসুক নেমে, সাধারণ নির্বাচনে তরুণ সমাজের ভূমিকা , 18 বছর বয়সের ভােটাধিকার, গণতন্ত্র ও তরুণ সমাজ, আঠারাে বছর বয়সের ভােটাধিকার ইত্যাদি। এটিও পড়ুন – ২০০ টি Application বা Latter লিখুন ৬ টি Application বা Latter শিখে

সাধারণ নির্বাচনে তরুণ সমাজের

[ প্রসঙ্গসূত্র ভূমিকা; তরুণদের ভােটাধিকারের পূর্বাবস্থা; তরুণদের ভােটাধিকারের পক্ষে যুক্তি; ; তরুণদের ভােটাধিকারে ফলশ্রুতি ; উপসংহার।]

“এ বয়স জেনাে ভীরু, কাপুরুষ নয়

পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,

এ বয়সে তাই নেই কোনাে সংশয় –

এ দেশের বুকে আঠারাে আসুক নেমে।

–সুকান্ত ভট্টাচার্য

ভূমিকা

ভারতের সংসদীয় গণতন্ত্রে আঠারাে বছর বয়সীদের ভােটাধিকার এক উল্লেখযােগ্য ঘটনা। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যখন প্রবল প্রতিকূলতা এবং সামরিক শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়াস চলেছে, তখন উপমহাদেশ ভারতে আঠারাে বছর বয়সের তরুণ-তরুণীদের ভােটাধিকার দানে তাদের রাজনৈতিক সচেতনতার স্বীকৃতি নিঃসন্দেহে এক বৈপ্লবিক কাজ।

তরুণদের ভােটাধিকারের পূর্বাবস্থা

তরুণদের বিদ্যাবুদ্ধি অপরিপক্ক। তারা হিতাহিত জ্ঞানশূন্য। অধ্যয়নের এই বয়সে তাদের অভিভাবকের উপর নির্ভর করতে হয়, ইচ্ছার বিরুদ্ধেও অভিভাবকের মতামত তাদের উপর বর্তায়। এইসব কারণে এতকাল ভারতে কেবল সাবালকদের ভােটাধিকার স্বীকৃত ছিল। স্বাধীন ভারতের তরুণরা ছিল উপেক্ষিত-রাজনৈতিক অধিকার-বঞ্চিত। এই সময় তাদের মতামতের কোন গুরুত্ব ছিল না, তারা ছিল অবাঞ্ছিত। রাষ্ট্রের উত্থান-পতনের দায়দায়িত্ব তাদের ছিল না, তারা ছিল নীরব দর্শক মাত্র।

তরুণদের ভােটাধিকারের পক্ষে

জনগণতন্ত্রে তরুণদের রাজনৈতিক মতামতের উপর রাষ্ট্রীয় কাঠামাের পরিবর্তন ও স্থায়িত্ব অনেকটা নির্ভর করে। আঠারাে বছরের তরুণ-তরুণীরা সাধারণত উচ্চ মাধ্যমিক ও মহাবিদ্যালয়ে স্নাতক পর্যায়ে অধ্যয়ন করে। এই বয়সে তারা দেশবিদেশের খবরাখবর সংগ্রহ করে, বিশ্ববিদ্যা আহরণ করে, ঘটনা বিচার করে। সংসার ভারবিহীন, অর্থনৈতিক চিন্তাশূন্য তরুণ-তরুণীরা তাই সজীব মনের আয়নায় রাজনৈতিক কার্যাবলীর যথার্থ মূল্যায়ন করতে সমর্থ হয়। এই সময় তাদের নিজেদের প্রতি আস্থা ও আত্মনির্ভরশীলতা জন্মায়। কারাে চাপিয়ে দেওয়া মতামত গ্রহণ করতে তারা লজ্জাবােধ করে। তাদের এই স্বাধীন মতামত সুস্থ গণতন্ত্রের অনুকূল। বয়ঃসন্ধির তরুণ-তরুণীরা সাধারণত নির্ভীক ও দুর্বার। কাপুরুষতা তাদের স্পর্শ করে না, বিপদসঙ্কুল পথে চলে তারা বিপ্লব ঘটাতে চায়, মানুষের কল্যাণে আত্মত্যাগ করতে কুষ্ঠাবােধ করে না।

তরুণদের ভােটাধিকারে ফলশ্রুতি

রাজনৈতিক কাঠামােয় ভােটাধিকারের মাধ্যমে তরুণদের অন্তর্ভুক্তিতে ভারত রাষ্ট্রে এক নতুন প্রাণের জোয়ার এসেছে। তরুণদের মতামতের প্রতিফলনে ভারতীয় রাজনীতিতে প্রৌঢ়ত্বের সীমারেখা থেকে যৌবনের অলিন্দে উত্তরণ ঘটেছে। পুরাতন ও গতানুগতিক চিন্তায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। গতানুগতিকতা পরিহার করে বর্তমান সরকার তরুণদের মনােমত শাসন উপহার দিতে উৎসাহী হয়েছে। দীর্ঘ বঞ্চনা ও অবিচারে কোন কোন রাজ্য ও অঞ্চল বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের শামিল হয়েছে। সহানুভূতিশীল বােঝাপড়ার মধ্য দিয়ে এইসব সমস্যার সমাধানের রাস্তা খোঁজা হচ্ছে। আশা করা যায়, খুব শীঘ্রই উপেক্ষিত রাজ্যের তরুণরা হিংসাশ্রয়ী কার্যকলাপ ত্যাগ করে সৃজনশীল কাজে আত্মনিয়ােগ করবে। রাজনৈতিক দলগুলি তাদের পুরাতন খােলস ছেড়ে তরুণদের মন জয় করতে উৎসাহিত হয়েছে। তরুণদের জন্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্প ঘােষণা করেছে। খেলাধুলায়ও তাদের মনজয়ের প্রচেষ্টা চলেছে।

উপসংহার

বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের তরুণ-তরুণী আজ ভােটাধিকারের মাধ্যমে দেশের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। শুধু প্রতিনিধি নির্বাচন নয়, নির্বাচিত হওয়ার অধিকার অর্জন করেছে। শাসনব্যবস্থায় স্বয়ং তারা আজ জড়িত। যথেচ্ছ জীবনযাত্রা, উজ্জ্বল আচরণ, উদাসীন মনােভাব, ড্রাগ আসত্তি প্রভৃতি কু-বৃত্তি বর্জন করে সৎ নাগরিকের মত চলার সময় এসেছে। দায়িত্ব সচেতন না হলে অধিকার ফলপ্রসূ হয় না। ভারতীয় তরুণ-তরুণী অর্জিত ভােটাধিকারের মাধ্যমে গতানুগতিক ও অন্তঃসারশূন্য সমাজ-ব্যবস্থা পরিহার করে নতুন পথের সন্ধান দেবে। প্রয়ােজনে প্রাচীন ও জীবন্মৃত মানুষের বুকে আঘাত হেনে বিপ্লব আনবে। বিশ্বকবির মত আমাদেরও বিশ্বাস—এই তরুণরাই দেশে মুক্তির জোয়ার আনবে। কবির সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে জীবন্ত ও প্রমুক্ত তরুণদের আহান জানাই –

“ওরে নবীন ওরে আমার কাঁচা

ওরে সবুজ, ওরে অবুঝ

আধমরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা।”

এটিও পড়ুন – কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায় প্রবন্ধ রচনা

ট্যাগঃ সাধারণ নির্বাচনে তরুণ সমাজের, জেনে নিন সাধারণ নির্বাচনে তরুণ সমাজের প্রবন্ধ রচনা ।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button