শৈশব স্মৃতি প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে
শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি, ফেলে আসা শৈশব চিরদিনই রঙিন দিনগুলি

অনুচ্ছেদ সমূহ
শৈশব স্মৃতি প্রবন্ধ রচনা অনুসারে লেখা যাবে ফেলে আসা শৈশব চিরদিনই রঙিন দিনগুলি, আমার শৈশব স্মৃতি, শৈশব স্মৃতি বিরাজমান দিনগুলি , শৈশবে ফেলে আসা দিনগুলি বা শৈশবে ফেলে আশা দিনগুলি, আমার ছেলেবেলা, শৈশব স্মৃতি রচনা, আমার ছেলে বেলা, শৈশব স্মৃতি অনুছেদ রচনা, [ শৈশব স্মৃতি ইংরেজি রচনা এখানে ] ইত্যাদি।
শৈশব স্মৃতি
ভূমিকা: শৈশবের স্মৃতির পাতা চোখের সম্মুখে মেলে ধরলে কত না বিধৃত ঘটনার কথা মনের কোণে ভিড় জমায়। আমার শৈশব-জীবনে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কত মধুময় ঘটনা ঘটেছে, যা এখন স্মৃতিপটে জাগ্রত হলে আমি বেশ আনন্দ অনুভব করি। শৈশব কালের সব ঘটনা ঠিক স্মরণে আসে না। কোনটা স্পষ্ট এবং কোনটা অস্পষ্টভাবে মনে পড়ে। যাহোক, স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট যে ঘটনাই হোক না কেন, ঘটনাগুলোর কথা স্মৃতিপটে জাগ্রত হলে ক্ষণিকের জন্যেও মনে যে আনন্দের সঞ্চয হয়, তা কম মধুময় নয়। তা যেন রঙিন স্বপ্নের মতো মনে হয়। হায়, সে হারানো দিনগুলো কি আর আমি কোন দিন ফিরে পাব।
আমার শৈশব প্রকৃতি :
শৈশবে মানুষের জীবনে বহু ঘটনা ঘটে থাকে, কিন্তু এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা একেবারেই বিধৃত হবার নয়। শৈশবে আমি মোটেই শান্তশিষ্ট ছিলাম না, বরং ছিলাম ঠিক তার উল্টো। আমার দুরন্তপনায় বাড়ির সবাই অস্থির থাকতেন। মুহূর্তের জন্যেও এক জায়গায় স্থির থাকতে পারতাম না। আমার স্বভাবটাই ছিল ঐ রকমের। বন্ধু সাথীদের নিয়ে এ পাড়া ও-পাড়া ঘুরে বেড়ানো এবং পুকুরে সাঁতার কাটা, এই ছিল আমার নিত্য-নৈমিত্তিক কাজ। সাঁতার কাটা, গাছে চড়া আর মাঠে ফুটবল খেলায় ছিলাম আমি অত্যন্ত পটু। এগুলো আমি অতি অল্প বয়সে আয়ত্ত করেছিলাম। আমাদের দলের নেতা ছিলাম আমি এবং সকলেই আমাকে একটু ভয় করতো। স্কুল ছেড়ে পালানো, প্রতিবেশীর বাগানে আম চুরি, লিচু চুরি করে খাওয়া এবং গাছে চড়া, পাখির ছানা পেড়ে আনা প্রভৃতি দুষ্কর্মের পরামর্শ আমিই দিতাম আমার ক্ষুদ্র দলটিকে। বাবা-মার শাসনকে কখনো ভয় করতাম না। তাঁরা বহু চেষ্টা করেও আমাকে এই কুকর্ম থেকে বিরত রাখতে পারেননি। কিন্তু তাই বলে যে আমি পড়াশুনায় খারাপ ছিলাম তা নয় বরং ভাল নম্বর পেয়ে সব পরীক্ষাতেই উত্তীর্ণ হতাম।
প্রথম স্মৃতি:
একবার গ্রীষ্মকালে স্কুল এক মাসের জন্য ছুটি হয়েছে। বাবা বললেন, গায়ের বাড়িতে বহুদিন যাওয়া আসা হয়নি এবার ঘুরে আসা যাক। শুনে আমার আনন্দ আর ধরে না। বহুদিন পরে দেশে যাবো, এ কথায় কার না আনন্দ লাগে। আমাদের গ্রাম খুব ছোট হলেও গ্রামের চাল-চলন ঠিক গ্রামের মত নয় একটু শহুরে ঘেঁষা। ছোট গ্রাম পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, ঝকঝকে তকতকে-দেখতে একখানা ছবির মতন। বিস্তীর্ণ মাঠ শ্যামলে শ্যামলে আচ্ছন্ন, ঘন সবুজ পাট ও ধানের ক্ষেত, আম, কাঠাল, লিচুর বাগান আর কাজল কালো পুকুরের পানি –এ সমস্ত ঘিরে গ্রামটিকে বিচিত্র মায়াময় করে তুলেছে। শহরের ন্যায় দালান-কোঠা, প্রকাণ্ড প্রাচীর ঘেরা স্কুল-কলেজ নেই বটে; টিন, কাঠ বা খড় দিয়ে তৈরি ছোট ছোট বাড়ি এবং স্কুল প্রাঙ্গণ সবই আমার অপূর্ব লাগতো। দেশে কবে যাব, প্রতিদিন দিন গুণতাম। শেষে এক শুভদিন দেখে গ্রামের পথে রওনা হলাম। গ্রামের ইউনিয়ন বোর্ডের লাল সুরকীর পথ বেয়ে গরুর গাড়িতে চড়ে আমাদের যাত্রা শুরু হলো।
আমাদের স্বপ্নঘেরা গ্রামে অবশেষে আমরা উপস্থিত হলাম। আমার সময় বয়সী চাচাতো, ফুফাতো ভাই-বোনেরা এসে আমাকে ঘিরে ধরলো। আমার দাদু বহুদিন পরে আমাকে পেয়ে একেবারে জড়িয়ে ধরলেন বুকে। যাহোক, ভাই-বোনদের পেয়ে আমি চঞ্চল ও পুলকিত হয়ে উঠলাম। ভাইদের নিয়ে কিভাবে ক’টা দিন কাটাবো, তার পরিকল্পনা করতে লাগলাম ।
আমাদের বাড়িটা ছিল উঁচু পাচিল ঘেরা প্রকাণ্ড দালান। গ্রামে ঐ একটি মাত্র দালান। আমার দাদুর একটা শখের বাগানবাড়ি ছিল। সে বাগানে ছিল নানাবিধ ফলের গাছ। যত ভালো আম, লিচু, কাঁঠাল গাছ আছে, সবই নিজ হাতে বুনেছিলেন তিনি। বাগানের মধ্যে ছিল একটি সানবাধানো পকর। দাদু দিনের অধিকাংশ সময়ই সেখানে কাটাতেন। আর ঐ সমস্ত গাছের প্রতি সদা সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। কোন গাছে কোন্ ফল ধরেছে বা পেকেছে, এ সবই ছিল তাঁর নখদর্পণে। কাউকেই তিনি সে সমস্ত ফলের গায়ে হাত ছোযাতে দিতেন না।
এটিও পড়ুন – মহরম প্রবন্ধ রচনা 700 শব্দের মধ্যে বা মুহর্ম – Muharram
দ্বিতীয় স্মৃতি:
আমরা যখন দেশে গিয়ে উপস্থিত হলাম, তখন গাছে গাছে আমের গায়ে রং ধরেছে। দেখে আমার আর তর সইল না। কিন্তু উপায় তো নেই। দাদু যে পাহারা দিয়ে আছেন। দাদুকে এড়িয়ে কি উপায়ে এই লোভনীয় ফলকে পেড়ে আনা যায় চিন্তা করতে লাগলাম। সুযোগ খুঁজতে লাগলাম। একদিন দুপুরে খাওয়ার পর একটি বই হাতে করে বিছানায় তিনি এলিয়ে পড়েছিলেন। বই পড়তে পড়তে শেষে দাদু ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি জানালা দিয়ে উকি মেরে দেখলাম, দাদু গভীর ঘুমে আচ্ছন, নাক ডাকাচ্ছেন গোঁ গোঁ করে। এই সুযোগ আমি আমার ভাইদের চুপিসারে ডেকে নিয়ে বললাম, তোরা সব নিচে থাক, আমি গাছে উঠি।” যে গাছে রসালো আম আছে, সেটি ছিল ঠিক দাদুর ঘরের জানালার পাশেই। অতি ধীরে ধীরে সন্তর্পণে পা টিপে টিপে গাছে উঠলাম। যেই একটা ডালে পা দিয়েছি অ-বাবা, অমনি মড়াৎ করে আমাকে নিয়ে ডালটি ভেঙ্গে পড়লো। শুব্দ শুনে দাদুর ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি নিঃসাড় হয়ে আছি মাটির উপরে। এক পায়ে ভীষণ চোট লেগেছে। এরপর আর কিছুই মনে নেই। চেতনা পেয়ে দেখি, আমি দাদুর বিছানায়। দাদু ঔৎসুক্যভরে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমার চেতনা প্রাপ্তিতে তাঁর মুখমণ্ডল আনন্দোদ্ভাসিত হয়ে উঠলো এক গাল হেসে বললেন, “এই যে ভাল হয়ে যাবে দাদু, আরো চুরি করবে দাদু?” দাদুর সেই স্নেহপূর্ণ কণ্ঠ আজও স্মৃতি পটে জাগলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় আমার মন পূর্ণ হয়ে উঠে।
মানসিক অনুভূতি: বহুদিন আগে আমার শৈশবকে হারিয়েছি, জীবনের সেই স্বপ্নময় দিনের রেশ আজ আর ভালভাবে মনে করতে পারি না। কিশোর মনের ছায়াময়, স্বপ্নময় দিনগুলি আর কোনদিন যে ফিরে পাব, তা ভাবা বাতুলতা মাত্র। ফিরে না পেলেও সেই ফেলে আসা অতীত জীবনে যখন মনের ভেলা ভাসাই তখন দেখতে পাই, জীবন-স্রোতের চতুর্দিকে কত সুরভি, কত মায়া, কত মমতা জড়ানো।
বিশ্বের এক স্বপ্নময় জগতের আবিষ্কারে যেমন কাপ্তান কলম্বাস অসীম কৌতূহল নিয়ে অনন্ত সমুদ্রস্রোতে জাহাজ ভাসিয়েছিলেন, সেই কৌতূহল এবং ঔৎসুক্য শৈশবকালে আমার চোখের উপর দিয়ে ভেসে বেড়াতো। তারপর জীবনের উপর দিয়ে পার হয়ে গেল কত যুগ, কত বসন্ত। আজ জীবনের উপর স্থবিরতা নেমে এসেছে- কিন্তু অতীতের পানে দৃষ্টি মেলি, বিস্মিত হয়ে ভাবি হায়! সেদিন কি আর ফিরে পাব ?
উপসংহার :
সংসারের নানা কাজকর্মের অবসরে নিরালায় কখনও কখনও ভাবি, যে-শৈশব স্মৃতি মধুময় তা আজীবন স্মৃতির মণিকোঠায় উজ্জ্বল থাকবে৷
লেখা পাঠিয়েছেঃ দিশা সাহা, কুশমণ্ডি
ট্যাগঃ শৈশব স্মৃতি, শৈশব স্মৃতি প্রবন্ধ রচনা