
রুদ্রাক্ষের গুণাগুণঃ রুদ্রাক্ষ (rudrākṣa) একপ্রকার বৃহৎ ও চওড়া পাতাওয়ালা চিরহরিৎ বৃক্ষ যার বীজ হিন্দুধর্মাবলম্বীগণ বিভিন্ন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করেন। এই গাছ Elaeocarpus গণভুক্ত; এর অনেক প্রজাতি রয়েছে যার মধ্যে E. ganitrus প্রজাতিটি প্রধানতঃ ধর্মীয় ‘মালা’ তৈরির কাজে লাগে। রুদ্রাক্ষ শব্দটি সংস্কৃত ভাষার, যার অর্থ রুদ্রের চোখ বা শিবের চোখ।
রুদ্রাক্ষের গুণাগুণ
শিব পুরাণে রুদ্রাক্ষের জন্মকথা সম্বন্ধে বলা আছে যে, হিমালয়ে বিচরণরত ক্ষত্রিয় রাক্ষস ত্রিপুরাসুরকে নিধন করার জন্য শিবকে অনেক বছর যাবৎ সংগ্রাম করতে হয়। সেই যুদ্ধে ব্যস্ত থাকার সময় কোন কারণে শিবের চোখে আঘাত লাগে, তার ফলে শিবের চোখ থেকে অশ্রুজল পতিত হতে থাকে। তাই দেখে পদ্মযােনি ব্রহ্ম সেই অশ্র জলকে বৃক্ষে পরিণত হওয়ার আদেশ দেন। তারপর সেই বৃক্ষটি বড় হলে তার ফুল ও ফল হতে থাকে। সেই ফলের নামই রুদ্রাক্ষ। যে সকল রুদ্রাক্ষ পাওয়া যায় তাদের মধ্যে –
ত্ম ১ৰ আমলকী আকারের রুদ্রাক্ষ শক্তিমান।
ত্ম২ৰ কুলের আকারের রুদ্রাক্ষ মধ্যম শ্রেণীর।
ত্ম৩ৰ ছোলার আকারের ছোট রুদ্রাক্ষ নিম্বন্ভরের।
রুদ্রাক্ষের লক্ষণঃ যে রুদ্রাক্ষ সকদিকে সমান, কোথাও আঁকাবাঁকা, উঁচু নীচু বা ভাল্দা চোরা নেই, সেই রুদ্রাক্ষ সবথেকে ভাল। এর ধারগুলো বেশ স্পষ্ট থাকে আর গায়ের কাটা কাঁটা দাগগুলি বাইরে বেরিয়ে থাকে। যে রুদ্রাক্ষ জলে ডুবে যায়, দুটো তামার টুকরাের মধ্যে রাখলে ঘুরতে থাকে। তেমন ছিদ্রাযুক্ত নয়, উজ্জ্বল ও ভারি হয়, এমন রুদ্রাক্ষ সবচেয়ে ভাল। একে সর্বোত্তম বলে মানা হয়। এই রুদ্রাক্ষুলােই সবচেয়ে বেশি উপকারী এ-কথা জোর দিয়ে বলা যায়। ভাল লক্ষণযুক্ত রুদ্রাক্ষ উজ্জ্বল ও ভারী হয়।
একমুখী রুদ্রাক্ষঃ একমুখী রুদ্রাক্ষের মধ্যে অনেক দৈবশক্তি থাকে। একমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণে অনেক প্রকার বাধা বিপত্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, শুধু তাই নয় ভগবান শিল্পে প্রতি বিশেষ ভক্তি প্রদর্শিত হয় এবং ইহাতে আধ্যাত্মিক উন্নতিও ঘটে। তাই একমুখী রুদ্রাক্ষ সকলের সেরা। একে গােল আকারের দেখা যায়। আবার গােলাকার ছাড়াও অর্ধচন্দ্রাকৃতি আকারেও দেখা যায়। একমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে বৈষয়িক লাভ বেশি পাওয়া যায়।
দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষঃ এটি দেখতে প্রায় চ্যাপ্টা ধরণের। এতে সমৃদ্ধি আর সুরক্ষার শক্তি বেশী পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণকারীকে কেউ বশ করতে পারে না। দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ স্ত্রী-লােকদের ক্ষেত্রে পরম উপকারী। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে অনেক সিদ্ধ সিদ্ধ হয়ে থাকে।
ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষরঃ বর্তমানে চিকিৎসক স্বীকার করছেন যে ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ ক্লরলে সন্ধে সন্দ্বে উপশম হয়। ত্রিমুখী রুদ্রাক্ষ ত্রিরত্ন ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ্বর, ত্রিগুণ সত্ত্ব, রজঃ,তমােঃ, আর ত্রিলােক আকাশ, মর্ত্য ও পাতালের যাবতীয় উপশক্তি নিহিত থাকে। যার জন্য নিমুখী রুদ্রাক্ষ সর্বোত্তম ও দৈবিক কথা সম্পন্ন।
চতুর্মুখী রুদ্রাক্ষঃ ব্রহ্মার প্রভাবেই চারমুখী রুদ্রাক্ষের উৎপত্তি। শিক্ষার্থীদের পড়াশােনায় মন বসাতে বিশেষ ফলদায়ক হয়। এই রুদ্রাক্ষের দ্বারা বাস্তব জীবনে শ্রীবৃদ্ধি লাভ হয়ে থাকে। এই রুদ্রাক্ষের মালা গলায় ধারণকালে কোন শত্রু ক্ষতি কতে পারে না।
পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষঃ পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষ শাস্তি প্রদানকারী এবং পাপ নাশক। এর দ্বারা মানুষের শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। এই রুদ্রাক্ষ একসন্দে তিনটি ধারণ করতে হয়, তিনটি ধারণ করলে সর্ব মনােস্কামনা পূরণ হয়।
ষষ্ঠমুখী রুদ্রাক্ষঃ ষষ্ঠমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে বিদ্যা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের ফল প্রকাশ পায়। যে কোন কঠিন বিপদ থেকে তিনি রক্ষা পাবেন। এই রুদ্রাক্ষ গলায় ধারণ করলে ভীষণভাবে মেধার বৃদ্ধি হয়।
সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষঃ সপ্তমুখী রুদ্রাক্ষ সাক্ষাৎ কামরূপ। ইহা রোগ নিবারক ও সমৃদ্ধিশালী। এই রুদ্রাক্ষ মণিবন্ধনে ধারণ করলে সুফল পাওয়া হয়।
দশমুখী রুদ্রাক্ষঃ এই রুদ্রাক্ষ সকল মানুষের কামনা পূরণ করে। এই রুদ্রাক্ষ বিপদনাশ ও রােগব্যাধি নিবারণ করে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে ধারণকারী বাকসিদ্ধ হয়ে থাকে।
একাদশমুখী রুদ্রাক্ষঃ স্বয়ং রুদ্রাক্ষ একাদশমুখী রুদ্রাক্ষ। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে গােদান,ব্রাহ্মণ ভােজন ও দেবসেবার ফল পাওয়া যায়। ধারণকারী সর্বত্র বিজয় প্রাপ্ত হয়।
দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষঃ এই রুদ্রাক্ষ সহজে পাওয়া যায় না। যদি ভাগ্যক্রমে ধারণ করা হয় তাহলে ধারণকারীর কোন রােগ, চিন্তা, শােক আর ভয় থাকে না। কোন শত্রু দারা তিনি আক্রান্ত হন না। কোন ব্যক্তি গােপনে তার সর্বনাশ ার চেষ্টা করলেও পারবে না। বরঞ্চ সেই ব্যক্তির সর্বনাশ হয়। এই দ্বাদশমুখী রুদ্রাক্ষ ধারণকারীর জ্ঞান ও ধনবৈভব বৃদ্ধি পায়।
চতুর্দশমুখী রুদ্রাক্ষ : রুদ্রদেবের চোখ থেকে চতুর্দশমুখী রুদ্রাক্ষের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এর গুণের পরিসীমা নেই। এই রুদ্রাক্ষ ধারণকারী সৰ্ব্ব স্থানে মান-সম্মান ও প্রতিপত্তি লাভ করে। এই রুদ্রাক্ষকে পূজা করে বা ধারণ করে সমস্ত পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
(যে সমস্ত রুদ্রাক্ষের কথা উপরে বলা হয় নাই তাহা খুবই দুর্লভ)।
এটিও পড়ুন – চিরযৌবন ও দীর্ঘায়ু লাভের সঠিক উপায়
ট্যাগঃ রুদ্রাক্ষের গুণাগুণ জেনে নিন, পঞ্চমুখী রুদ্রাক্ষের গুণাগুণ, রুদ্রাক্ষ মালার উপকারিতা, রুদ্রাক্ষের মালা দাম, একমুখী রুদ্রাক্ষ উপকারিতা, একমুখী রুদ্রাক্ষ দাম, দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ, রুদ্রাক্ষ ধারণের নিয়ম, জেনে নিন রুদ্রাক্ষের গুণাগুণ
One Comment