মানব কল্যাণে সাহিত্য প্রবন্ধ রচনা 700 শব্দের মধ্যে
মানব কল্যাণে সাহিত্য রচনা , সাহিত্যের গুরুত্ব সম্পর্কে রচনা

অনুচ্ছেদ সমূহ
মানব কল্যাণে সাহিত্যঃ সাহিত্য বলতে সাধারণত যথাসম্ভব কোনো লিখিত বিষয়বস্তুকে বুঝায়। সাহিত্য হচ্ছে শিল্পের একটি অংশ বলে বিবেচিত হয়, অথবা এমন কোনো লেখনী, যেখানে শিল্পের বা বুদ্ধিমত্তার আঁচ পাওয়া যায়, অথবা যা বিশেষ কোনো প্রকারে সাধারণ লেখনী থেকে আলাদা৷ এককথায়, ইন্দ্রিয় দ্বারা জাগতিক বা মহাজাগতিক চিন্তা চেতনা, অনুভূতি, সৌন্দর্য ও শিল্পের লিখিত বা লেখকের বাস্তব জীবনের অনুভূতি হচ্ছে সাহিত্য।
মানব কল্যাণে সাহিত্য
ভূমিকা: এই সৌন্দর্যভরা বিশ্বে মানুষ একা বাস করতে পারে না। তারা চায় সুসংবদ্ধ ও সম্মিলিতভাবে পরস্পরের প্রতি প্রেম ও মৈত্রীর ভাব নিয়ে বাঁচতে? তাই তাঁরা সৃষ্টি করেন সমাজ। আর তার মধ্যেই আপন ব্যক্তি-সত্তার বিকাশ চায়। আজ সমাজকে বাদ দিয়ে মানুষের পরিচয় নেই; যদিওবা কেউ থাকে তাহলে সে অসম্পূর্ণ।
মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ এবং তার সাংস্কৃতিক উৎকর্ষতার পক্ষে সাহিত্য আজ অগ্রদূত। সমাজ বহু জীবনকে বাইরের দিক থেকে এক করে, আর সাহিত্য মানসিকভাবে বহু হৃদয়কে নিগূঢ় ঐক্যানুভূতির দ্বারা গ্রথিত করে। তাই সাহিত্য মানব কল্যাণের, মানব-মৈত্রীর বাণী নিয়ে এগিয়ে এসেছে। নানা দেশের নানা মানুষের মধ্যে আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতিগত অজস্র প্রভেদ রয়েছে। এসব কারণে সকল দেশের মানব সমাজ সংঘবদ্ধ হয়ে আজও বিশ্ব-সমাজ গঠন করতে পারেনি। কিন্তু মানুষের রচিত সাহিত্য মুক্তপক্ষ বিহঙ্গের মতো দেশগত, জাতিগত ও সমাজগত যাবতীয় কৃত্রিম ব্যবধানকে অনায়াসে অতিক্রম করেছে। মানুষের উপদেশ বাক্যে যা হয়নি, বিশ্ব শান্তি পরিষদ যা করতে পারেনি, অথবা নোবেল সমিতির শান্তি পুরস্কার বিতরণেও যা সার্থক হয়ে উঠেনি, সাহিত্য অনায়াসে তা তে পেরেছে এবং করেছে।
সাহিত্য দেশকালের গণ্ডী অতিক্রম করে বিশ্বমানবের রসপিপাসু চিত্তে আপন চিরস্থায়ী আসন লাভ করে। হৃদয়ের ক্ষেত্রে এই যে মিলন এটাই সাহিত্যের বড় সম্পদ। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম সাহিত্য আনন্দরসের উত্তরাধিকারী সকলেই–প্রেম-ভালবাসা-স্নেহ-প্রীতি ইত্যাদি সদ্গুণাবলী সকল দেশের মানুষের মনে স্থান লাভ করে। কালিদাসের মেঘদূতের’ রসাস্বাদনে ইউরোপীয় মনীষী যেমন আনন্দ অনুভব করেন, তেমনি জার্মান কবি গোটের ‘ফাউস্ট’ বা হোমারের ‘ইলিয়ড’ ‘ওডেসি’ পাঠ করে ভারতীয় রসিকচিত্তও পুলকে উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠে। এখানেই বিশ্বমানবের হৃদয়ের যোগ। বিশ্বমানব কল্যাণের বাণীবাহক আজ সাহিত্য। বিশ্বমানবকল্যাণে সাহিত্যিক অবদান অনস্বীকার্য।
এটিও পড়ুন – বাংলার কৃষক প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে
সাহিত্য আর্ট কেন?
সাহিত্য একটা বিশেষ রকমের আর্ট বা শিল্প। তার উপাদান হলো মানবজীবন। মানুষের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা এবং বহু বিচিত্র বাসনা-কামনাকেই সাহিত্যশিল্পী তাঁর রচনার মধ্যে রূপায়িত করে তোলেন। সাহিত্য রচয়িতা সমাজেরই মানুষ; সুদূরপ্রসারী সামাজিক প্রভাব তাঁর সাহিত্যের প্রাণশক্তিকে স্পন্দিত করবে। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশে সৃষ্ট সাহিত্যের সর্বজনীন আবেদন তাহলে কি প্রকারে সম্ভবপর? এক দেশের লোকের পক্ষে যা সত্য, অন্য দেশের লোকের পক্ষে তা কি প্রকারে অভিন্ন হতে পারে ? প্রশ্নটির সদুত্তর পেতে হলে আমাদের জানা দরকার সাহিত্যের সত্য আর জীবনের সত্য উভয়ের মধ্যে পার্থক্য আছে। সংসারী মানুষের জীবনে অপূর্ণতার সীমা নাই। মানুষ জীবনে যা পায় তা’ তার অন্তর কামনাকে সম্পূর্ণ পরিতৃপ্ত করতে পারে না। কারণ, সে যা চায় তা’ সে পায় না, রবীন্দ্রনাথ এই সত্যকে উপলব্ধি করে বলেছেন
“আমি যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই
যাহা পাই তাহা চাই না।”
চাওয়া-পাওয়ার এই যে অসমতা, এই যে অসংগতি এখানেই জীবনের ট্রাজিডি। আর এই অপূর্ণতার তীব্র বেদনাবোধই মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে জীবনকে সুন্দরতর ও মহত্তর করে বিকশিত করতে। কিন্তু সাহিত্য-সত্য জীবন-সত্যের মতো প্রতি পদে বিঘ্নিত নয়। শিল্পীর ভাবজগতে সে এমনভাবে রূপান্তরিত হয়ে যায় যে, তার প্রকাশিত রূপে একটা সম্ভাব্য সম্পূর্ণতার সুর অনুরণিত হয়ে উঠে। এই যে ভাবনা-ঘন সত্য, তার মধ্যে ইংগিত থাকে জীবনে যা ঘটেনি অথচ যা ঘটলে জীবনটা শতদলের ন্যায় বিকশিত হতো। রচয়িতার গভীর অনুভূতির রসে জারিত হয়ে সমাজের খণ্ডিত ব্যক্তিজীবনের সত্য ভাবগম্ভীররূপে, একটা সামগ্রিক সত্তা লাভ করে। এই সম্পূর্ণতা বিধানে দক্ষ শিল্পীর নৈপুণ্য প্রকাশ পায়। যিনি যথার্থ শিল্পী তাঁর রচনায় সামগ্রিক আবেদন অত্যন্ত সুন্দরভাবে ব্যঞ্জিত হয়ে উঠে।
সাহিত্যের লক্ষ্য কী ?
মানুষ চায় অপূর্ণতার মধ্যে সম্পূর্ণতার আভাস, সসীমের মধ্যে অসীমের সুর। জীবনে যে ধন পাওয়া গেল না তাকেই সে খোঁজে। এই অপূর্ণতা সাহিত্যের সোনার কাঠির যাদুস্পর্শে জীবন্ত হয়ে উঠে। আর সে রহস্যসৃষ্টিকে অনুভব করে মানুষের মন ভরে উঠে আনন্দে। সাহিত্যের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে সুন্দরের সাধনা। এইরূপে তা সফলতার পথে অগ্রসর হয়ে সাহিত্যের সঙ্গে জীবনের অবিচ্ছেদ্য সংযোগ নিবিড় ও গভীর হয়ে উঠে। বাস্তব জীবনে দেশে দেশে বিভেদ থাকতে পারে। কিন্তু মানবীয় ধর্মে সে পার্থক্য কোথায়? তা’হলে ‘অভিজ্ঞান শকুন্তলম্’ বিশ্বজনীন সমাদর লাভ করতে পারতো না, ম্যাক্সিম গোর্কির ‘মাদার’-এর জীবনের বিচিত্র কাহিনী ব্যথা করুণ রসে মাতৃস্নেহে পাগল মানুষের মনকে উজ্জীবিত করে তুলতে পারতো না।
মানুষ গঠন করেছে সমাজ। আর সেই সমাজ আবার প্রভাব বিস্তার করেছে মানুষের মনে। সমাজ-সচেতন সাহিত্যিকের রচনায় যে সকল নর-নারীর হৃদয় দ্বন্দ্বের পরিচয় আমরা পাই, সমাজের অমোঘ শক্তি কখনো প্রকাশ্যে, আবার কখনো নেপথ্যে তাহার প্রেরণা যোগায়।
সাহিত্য চিরন্তন মানব-সত্য, মানবকল্যাণ, কিংবা মানব ধর্মকে যে অগ্রাহ্য করতে পারে না, তার একটি আধুনিক দৃষ্টান্ত দিচ্ছি। বাংলা সাহিত্যের কথাশিল্পী শরৎচন্দ রিয়ালিস্ট বা বস্তুতন্ত্রবাদী বলে পরিচিত। তবে এ-ও বলা যায় বাস্তব রূপায়ণের জন্যেই সাহিত্যসংসারে তাঁর যত নিন্দা অথবা প্রশংসা। কিন্তু শরৎ-সাহিত্যের বাস্তবতা শুধুই কি বস্তুকেন্দ্রিক ? মানবজীবনের কোন গভীরতর সত্য কি তার মধ্যে প্রতিবিম্বিত হয়নি? শরৎচন্দ্রের রচিত সাহিত্যনীতির প্রশ্নটি কি একেবারেই অবান্তর? শরৎচন্দ্রের প্রতি আমরা অন্তরের অকুণ্ঠ শ্রদ্ধা নিবেদন করি কিসের জন্য? মমতাহীন সমাজের চোখে যে নারী ও পুরুষ অবাঞ্ছিত, সমাজ যাদের কোনদিনই কৃপার দৃষ্টিতে দেখল না, শরৎচন্দ্র সেই সব মানুষকেই তাঁর সাহিত্যে স্থান দিয়েছেন।
সমাজ-নীতির বিচারে হয়তো তারা পতিত, মানুষ নামের অযোগ্য; কিন্তু সমাজ নীতির উপরেও একটা নীতি আছে, তা হচ্ছে উচ্চতর মানবতাবোধ। সেই নীতির বিচারেই তারা মানুষের অধিকার দাবি করতে পারে; এ কথাই শরৎচন্দ্র তাঁর রচনার মধ্যে দিয়ে আমাদের বুঝাতে চেয়েছেন। উদার মানব-ধর্মকে, মূলনীতিকে, কল্যাণের বাণীকে সর্বান্তঃকরণে ও ব্যাপক সহৃদয়তাবশে স্বীকার করে নিয়েছেন বলেই শরৎচন্দ্র বাস্তববাদী হয়েও মহৎ শিল্পী হতে পেরেছেন।
ট্যাগঃ মানব কল্যাণে সাহিত্য রচনা, মানব কল্যাণে সাহিত্য প্রবন্ধ রচনা, মানব কল্যাণে সাহিত্য PDF , Free মানব কল্যাণে সাহিত্য রচনা, মানব কল্যাণে সাহিত্য রচনা ছাত্র ছাত্রীদের জন্য, মানব কল্যাণে সাহিত্য রচনা ৭০০ শব্দের মধ্যে।
লেখা পাঠিয়েছে- দিশা সাহা (রাইগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়)