উচ্চ মাধ্যমিকজানা অজানাপ্রবন্ধ রচনা

মহকুমা শাসকের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

পশ্চিমবঙ্গের মহকুমা শাসকের ক্ষমতা ও কার্যাবলির বিবরণ | Mahakuma

মহকুমা (Subdivision) পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রশাসনিক একক। এই রাজ্যের জেলাগুলিকে শাসনকার্যের সুবিধার জন্য কয়েকটি মহকুমায় বিভক্ত করা হয়। মহকুমা শাসকের ক্ষমতা এর উপর ন্যাস্ত থাকে মহাকুমাগুলি।

পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলা বর্তমানে ৬২টি মহকুমায় বিভক্ত। মহকুমাগুলি আবার সমষ্টি উন্নয়ন ব্লকে বিভক্ত। প্রতিটি মহকুমার শাসনকার্য পরিচালনার জন্য একজন মহকুমা-শাসক নিযুক্ত হন।

মহকুমা শাসকের ক্ষমতা ও কার্যাবলি

মহকুমা শাসকের ক্ষমতা ও কার্যাবলি: জেলা প্রশাসনের পরবর্তী স্তরে রয়েছে মহকুমা প্রশাসন। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি জেলাকে কয়েকটি মহকুমায় ভাগ করা হয়েছে। প্রত্যেক মহকুমার প্রশাসনের প্রধান হলেন মহকুমা শাসক। মহকুমা স্তরে মহকুমা শাসক হলেন রাজ্য সরকারের মুখ্য প্রতিনিধি।মহকুমা শাসকের ক্ষমতা ও কার্যাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল –

প্রশাসনিক দায়িত্ব:

মহকুমা স্তরে মহকুমা প্রশাসনের প্রধান হলেন মহকুমাশাসক। মহকুমার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য ভারতীয় দণ্ডবিধির কয়েকটি নির্দিষ্ট ধারা প্রয়োগ করার ক্ষমতা তাঁকে দেওয়া হয়েছে। মহকুমার মধ্যে পুলিশবিভাগের কাজকর্মের তিনি তদারকি করে থাকেন। এ ছাড়া মহকুমার রাজস্ববিভাগের কর্মচারীদের নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ইত্যাদি বিষয়ে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। মহকুমার জনগণের সঙ্গে রাজ্য প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তোলার দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়েছে।

রাজস্বসংকাল দায়িত্ব:

মহকুমাশাসক মহকুমার প্রধান আধিকারিক হিসেবে মহকুমার প্রশাসন ছাড়াও রাজস্ববিভাগের দায়িত্বও পালন করেন। এজন্য তাঁকে মহকুমার রাজস্ব আধিকারিক বলা হয়। ভূমি রাজস্ব সম্পর্কিত বিরোধ নিষ্পত্তি, রাজস্ববিভাগের তত্ত্বাবধান ও পরিদর্শন, খাজনা নির্ধারণ ও রাজস্ব সংগ্রহ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি পালন করেন। জমির সীমানা নির্দেশ ও জমির রেকর্ড তৈরি ও সংরক্ষণের দায়িত্বও তাঁর হাতে রয়েছে।

বিচারবিভাগীয় দায়িত্বঃ

নির্দেশমূলক নীতি অনুসারে বর্তমানে স্থানীয় প্রশাসনে বিচারবিভাগ ও শাসনবিভাগকে স্বতন্ত্র করে দেওয়ার ফলে মহকুমাশাসক বর্তমানে আর বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেন না। অবশ্য মহকুমার প্রশাসনিক ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে তাঁর হাতে কিছু আধা-বিচারবিভাগীয় ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল—–— জরুরিকালীন অবস্থায় সতর্কতামূলক আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ ও প্রয়োগ, এলাকার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স অনুমোদন, সাধারণ ব্যাবসা ও অন্যান্য লাইসেন্স প্রদান ইত্যাদি।

উন্নয়নসংক্রান্ত দায়িত্ব:

মহকুমাশাসকের হাতে মহকুমার উন্নয়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এজন্য সমাজ-উন্নয়ন প্রকল্পগুলির রূপায়ণের এবং জাতীয় সম্প্রসারণ পরিকল্পনা ও যাবতীয় সরকারি উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের তিনি তত্ত্বাবধান করে থাকেন। এ ছাড়া প্রাকৃতিক বিপর্যয়জনিত সমস্যার (যেমন খরা, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, মহামারি ইত্যাদি) ক্ষেত্রে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের জরুরি কাজকর্ম পরিচালনা করেন তিনি। উদ্বাস্তু পুনর্বাসনের দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়েছে।

সমন্বয়সংক্রান্ত দায়িত্ব:

মহকুমা স্তরের বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে জেলাশাসককে তিনি নিয়মিত অবহিত করে থাকেন। অন্যদিকে পঞ্চায়েত সমিতি, বিডিও এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গেও তাঁকে ঘনিষ্ঠ জনসংযোগ রেখে চলতে হয়। এভাবে মহকুমাশাসক জেলাশাসকের সহকারীরূপে প্রশাসনে একটি অপরিহার্য ভূমিকা পালন করেন। মহকুমার এলাকার মধ্যে রাজ্য প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের, যেমন—পশুপালন, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, রাজস্ব ইত্যাদির সমন্বয়সাধনের দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায়, বর্তমানে পঞ্চায়েতিরাজ ব্যবস্থার উদ্ভব হওয়ায় এবং ব্লক উন্নয়ন আধিকারিকদের কাজকর্মের প্রসার ঘটায় মহকুমাশাসকের একক ভূমিকা বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মহকুমাগুলি জেলা ভিত্তিক তালিকা

  • উত্তর ২৪ পরগনা জেলা

বারাসত সদর মহকুমা, বসিরহাট মহকুমা, ব্যারাকপুর মহকুমা, বিধাননগর মহকুমা, বনগাঁ মহকুমা।

  • দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা

আলিপুর সদর মহকুমা, ক্যানিং মহকুমা, ডায়মন্ড হারবার মহকুমা, কাকদ্বীপ মহকুমা, বারুইপুর মহকুমা।

  • হাওড়া জেলা

হাওড়া সদর মহকুমা, উলুবেড়িয়া মহকুমা।

  • নদীয়া জেলা

কৃষ্ণনগর সদর মহকুমা, রানাঘাট মহকুমা, কল্যাণী মহকুমা, তেহট্ট মহকুমা

  • মুর্শিদাবাদ জেলা

বহরমপুর সদর মহকুমা, লালবাগ মহকুমা, জঙ্গিপুর মহকুমা, ডোমকল মহকুমা, কান্দি মহকুমা।

  • দার্জিলিং জেলা

দার্জিলিং সদর মহকুমা, কার্শিয়াং মহকুমা, শিলিগুড়ি মহকুমা, মিরিক মহকুমা

  • কালিম্পং জেলা
    কালিম্পং মহকুমা
  • জলপাইগুড়ি জেলা
    জলপাইগুড়ি সদর মহকুমা, মালবাজার মহকুমা।
  • আলিপুরদুয়ার জেলা
    আলিপুরদুয়ার মহকুমা
  • কোচবিহার জেলা
    কোচবিহার সদর মহকুমা, দিনহাটা মহকুমা, তুফানগঞ্জ মহকুমা, মেখলিগঞ্জ মহকুমা, মাথাভাঙা মহকুমা।
  • উত্তর দিনাজপুর জেলা
    রায়গঞ্জ সদর মহকুমা, ইসলামপুর মহকুমা,
  • দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা

বালুরঘাট সদর মহকুমা, গঙ্গারামপুর মহকুমা

  • মালদা জেলা
    মালদা সদর মহকুমা, চাঁচল মহকুমা, পূর্ব বর্ধমান জেলা, বর্ধমান সদর উত্তর মহকুমা, বর্ধমান সদর , ক্ষিণ মহকুমা, কালনা মহকুমা, কাটোয়া মহকুমা।
  • পশ্চিম বর্ধমান জেলা
    দুর্গাপুর মহকুমা, আসানসোল মহকুমা।
  • বীরভূম জেলা
    সিউড়ি সদর মহকুমা, বোলপুর মহকুমা, রামপুরহাট মহকুমা
  • বাঁকুড়া জেলা
    বাঁকুড়া সদর মহকুমা, বিষ্ণুপুর মহকুমা, খাতড়া মহকুমা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা, তমলুক সদর মহকুমা, কাঁথি মহকুমা, এগরা মহকুমা, হলদিয়া মহকুমা
  • পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা
    মেদিনীপুর সদর মহকুমা, খড়্গপুর মহকুমা, ঘাটাল মহকুমা।
  • ঝাড়গ্রাম জেলা
    ঝাড়গ্রাম মহকুমা
  • হুগলি জেলা
    চুঁচুড়া সদর মহকুমা, শ্রীরামপুর মহকুমা, চন্দননগর মহকুমা, আরামবাগ মহকুমা।
  • পুরুলিয়া জেলা
    পুরুলিয়া সদর মহকুমা, ঝলদা পশ্চিম মহকুমা, রঘুনাথপুর মহকুমা, মানবাজার মহকুমা

সোর্স- রাষ্ট্রবিজ্ঞান শিক্ষক (ড. দেবব্রত সিংহ)

লেখা পাঠিয়েছে – রনাজিত দাস (মালদা)

ট্যাগ: মহকুমা শাসকের ক্ষমতা, মহকুমা শাসকের ক্ষমতা ও কার্যাবলী, মহকুমা শাসকের ক্ষমতা সম্পর্কে বিস্তারিত।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button