প্রবন্ধ রচনা

গাইসাল রেল দুর্ঘটনা প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে

গাইসাল রেল দুর্ঘটনাঃ গাইসাল রেল দুর্ঘটনা এ এক যুগান্তকারী ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা, ইতিহাস ঘাঁটলে এ রকম আর দুর্ঘটনার কথা জানা যায় না। আজও বহু পরিবারকে এই দুর্ঘটনার কথা মন ভারাক্রান্ত ও চোখ অশ্রুসিক্ত করে। প্রিয় ছাত্র ছাত্রীদের কথা মথায় রেখে গাইসাল রেল দুর্ঘটনা প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল। এর আগের পোষ্টে প্রণব মুখোপাধ্যায় এর বর্ণময় অধ্যায় নিয়ে প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হয়েছে চাইলে দেখে নিতে পারো। গাইসাল রেল দুর্ঘটনা ইংরেজি প্রবন্ধ রচনা চাইলে কমেন্ট করে যাতাতে পারো।

গাইসাল রেল দুর্ঘটনা প্রবন্ধ রচনা বা রচনা অনুসারে আর কী কী অনুরূপ প্রবন্ধ রচনা লেখা যায় তা হল – একটি ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ; গাইসালের দুর্ঘটনা ও ক্ষয়ক্ষতি, তোমার জানা একটি রেল দুর্ঘটনা, তোমার শোনা ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনা ইত্যাদি।

গাইসাল রেল দুর্ঘটনা

[ প্রসঙ্গসূত্র- ভূমিকা দুর্ঘটনার বিবরণ ; ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ; দুর্ঘটনার কারণ,  উপসংহার। ]

ভূমিকা

আমরা জীবন পথে এগিয়ে চলি। ভবিষ্যৎ আমাদের অজানা। মাঝে মাঝে বিপর্যয়, দুর্ঘটনা ও জটিল সমস্যা আমাদের চলার পথ স্তব্ধ করে দেয়, আমরা থমকে দাড়াই। ছােটখাটো দুর্ঘটনা তাে লেগেই থাকে। তা আমাদের ধর্তব্যের মধ্যে আসে না। মাঝে মাঝে বড়মাপের দুর্ঘটনায় মানব সভ্যতা ধাক্কা খায়, ক্ষয় ক্ষতিতে মানুষ শিউরে ওঠে। ১৯৯৯ খ্রীস্টাব্দের ১লা আগস্ট রাতের অন্ধকারে উত্তরবঙ্গের গাইসালে দিল্লীগামী ব্রহ্মপুত্র মেল এবং অসমের গুয়াহাটাগামী আওয়ধ-অসম এক্সপ্রেস মুখােমুখি ধাক্কা মারে, এক ভয়াবহ দুর্ঘটনার সৃষ্টি হয়। ক্ষয়ক্ষতি ও জীবনহানির ব্যাপকতায় এই শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ দুর্ঘটনা নামে চিহ্নিত।

দুর্ঘটনার বিবরণ

১৯৯৯ খ্রীস্টাব্দের ১লা আগস্ট রাত্রি ২টার সময় দিল্লীগামী ব্রহ্মপুত্র মেল ও গুয়াহাটীগামী আওয়ধ-অসম এক্সপ্রেস দ্রুত বেগে ছুটে চলেছে। যাত্রীরা শেষরাতের তন্দ্রায় আচ্ছন্ন। ব্রহ্মপুত্র মেল আলুয়াড়ী স্টেশন ছেড়ে ডাউন লাইন ধরে এগিয়ে চলে। গাইসাল নামক স্টেশনে এর সঙ্গে আওয়ধ-অসম এক্সপ্রেসের ক্রসিং হওয়ার কথা। কিন্তু ব্যতিক্রম ঘটল। কিসানগঞ্জ স্টেশন অতিক্রম করে আওয়ধ-অসম এক্সপ্রেস অজানিত কারণে আপ লাইন ছেড়ে ডাউন লাইনে ঢুকে পড়ে। গাইসাল স্টেশনে এটি ব্রহ্মপুত্র মেলের একেবারে মুখােমুখি এসে পড়ে। সশব্দে ট্রেনটি ব্রহ্মপুত্র মেলের উপর আঘাত হানে। চলন্ত থাকার জন্য একটি ট্রেন অন্য ট্রেনের উপর উঠে পড়ে। ত্রিশ-চল্লিশ ফুট উঁচু হয়ে যায়। ব্রহ্মপুত্র মেলের একটি বগি প্রায় পঞ্চাশ ফুট উচু হয়ে আওয়ধ-অসম এক্সপ্রেসের একটি বগির উপর ঝুলতে থাকে। দুটি ট্রেনের ১৫টি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়। একটি ইঞ্জিনতাে লাইনচ্যুত হয়ে পথে গিয়ে পড়ে। দুই ইঞ্জিনের সজোর সংঘর্ষে বগিতেও আগুন জ্বলে ওঠে। ঐ কালামিতে অগণিত যাত্রী ভস্মীভূত হয়। কিছু বােঝার আগেই বহু মানুষ মৃত্যুর কোলে লুটিয়ে পড়ে। চারিদিকে ছিটকে পড়ে গাড়ির ভাঙা অংশের সঙ্গে মানুষের হাত, পা, মাথা প্রভৃতি পিষ্ট দেহাংশ। যেদিকে তাকাও লাশের স্তুপ। মানুষের আর্তচিৎকারে বাতাস গাঢ় হয়ে যায়। মা, বাবা ও শিশু একত্রে মরে পড়ে থাকে। মুমুর্যদের গোঙানিতে মন ভারাক্রান্ত ও চোখ অশ্রুসিক্ত হয়। দোমড়ানাে বগির মধ্যে মানুষ পিষ্ট হয়ে থাকে। কেউ কেউ বেঁচে থাকলেও বেরুতে পারে না। তাদের যন্ত্রণা কাতর কান্না শােনা যায় না, হৃদয় মন ভারাক্রান্ত হয়। এক মর্মান্তিক চিত্র। এই দুর্ঘটনায় প্রায় ৫০০ যাত্রী প্রাণ হারায়। বে-সরকারী হিসাবে এর পরিমাণ আরাে বেশি।

এটিও পড়ুন – নদীর ভাঙন ও নীড়হারা মানুষ প্রবন্ধ রচনা

ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ

শতাব্দীর অন্যতম বৃহৎ দুর্ঘটনার অব্যবহিত পরেই ত্রাণকার্য শুরু হয়। প্রাথমিকভাবে কামরার যাত্রীরাই উদ্ধার কাজে এগিয়ে আসে। দুর্ঘটনার অনতি দূরস্থ পাঞ্জিপাড়ার বি. এস. এফ. জওয়ানরাই ঘটনাস্থলে পৌঁছেই উদ্ধারকার্যে হাত লাগায়। দোমড়ানো কামরায় আটক পড়া মানুষের আর্তনাদ শােনা গেলেও তাদের অনেককেই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। রাতের অন্ধকারে উদ্ধার কাজ চালাতে অসুবিধা হয়। ইতিমধ্যে রেলের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা উদ্ধার কার্যে সহায়তা করে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানাে হয়। বগি কেটে লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশের পাহাড় জমে যায়। দুর্গন্ধ ছড়াতে থাকে। আত্মীয় স্বজনের সনাক্তকরণের পর গণচুল্লিতে মৃতদেহ দাহ করা হয়। শত শত পচা গলিত মৃতের সংকার সে এক বিভীষিকা। তৎকালীন রেলমন্ত্রী দুর্ঘটনার নৈতিক দায়িত্ব মাথায় নিয়ে ইস্তফা দেন। দুর্ঘটনার কারণ জানার জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়। সরকার মৃত ও আহতদের পরিবার বর্গকে আর্থিক সাহায্য বরাদ্দ করেন। গাইসাল সংলগ্ন সিগন্যাল দাতা, গেটম্যান প্রভৃতি কয়েকজন রেলকর্মী দুর্ঘটনার অব্যবহিত পরেই পালিয়ে যায়। কয়েকজন রেলকর্মীকে ইতিমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে। রেলকর্মীরা একটু নড়ে চড়ে বসেছে।

দুর্ঘটনার কারণ

ভুল সিগন্যাল দুর্ঘটনার কারণ। কেউ বলেন সিগন্যাল অকেজো হয়ে পড়ে তাই দুটি ট্রেন একই লাইনে এসে পড়ে এবং মুখােমুখি ধাক্কা মারে। পদস্থ রেলকর্মীদের ধারণা নাশকতা এই দুর্ঘটনার মূল কারণ। সিগন্যালম্যান পলাতক তাই এর কারণ এখনাে অজানাই থেকে গেছে। নিরাপত্তার অভাব এবং সিগন্যালম্যানকে ভুল সিগন্যাল দিতে বাধ্য করনাে হয়তাে এই দুর্ঘটনার হেতু। এর কারণ জানার জন্য কমিশনের রিপাের্টের অপেক্ষায় থাকতে হবে।

এটিও পড়ুন – ভ্রমণের প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে

উপসংহার

দেখা যায় বেশিরভাগ দুর্ঘটনা রেলকর্মীদের’ অবহেলা ও গাফিলতির ফল। তাদের সতর্ক থাকতে বাধ্য করা উচিত। এই সব কর্মীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সচেতনতা বিষয়ে ট্রেনিং দেওয়া উচিত। তাদের কাজের গুরুত্ব সম্বন্ধে সম্যক ধারণা থাকা বাঞ্ছনীয়। সিগন্যাল ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয় করলে বহু দুর্ঘটনা এড়ানাে যায়। রেলের নিরাপত্তা সুদৃঢ় করা আশু প্রয়ােজন। যাত্রীদের সুরক্ষার জন্য রেলমন্ত্রককে সচেতন হতে হবে। চাই মানবিক অনুভূতির বিকাশ।

ট্যাগঃ #গাইসাল রেল দুর্ঘটনা, জেনে নিন গাইসাল রেল দুর্ঘটনা, গাইসাল রেল দুর্ঘটনা রচনাএটিও পড়ুন – নদীর ভাঙন ও নীড়হারা মানুষ প্রবন্ধ রচনা

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button