প্রবন্ধ রচনা

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ রচনা 700 শব্দের মধ্যে

বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য Seasonal diversity of Bangladesh

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ রচনা 700 শব্দের মধ্যে, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ রচনা অনুরূপ রচনা লেখা যাবে ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য, Seasonal diversity of Bangladesh ইত্যাদি।

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ

ভূমিকা : বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু নিজের নিজের বৈশিষ্ট্য নিয়ে একে একে আবির্ভূত হয়। এদের আবির্ভাবে এখানে অপভাবে প্রাকৃতিক লীলাবৈচিত্র্য ঘটে থাকে। এই ছয়টি ঋতু গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। এদের বিভিন্ন রূপ বৈচিত্র্যে বাংলাদেশের নৈসর্গিক দৃশ্যে অনেক পরিবর্তন ঘটে। প্রত্যেকটি ঋতুর আগমনে বাংলাদেশের প্রকৃতি সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যে ঝলমল করে উঠে।

গ্রীষ্মের আগমন ঃ গ্রীষ্ম ঋতুর আগমনে সূর্যকিরণ প্রখর হয়ে মাঠ বা বাঁইরে থাকে। ছোট ছোট পুকুর, খাল-বিল শুকিয়ে যায়। জাগায় জাগায় পানীয় জলের অভাব পরিলক্ষিত হয়। গ্রীষ্মের দুপুরে প্রখর সূর্যতাপ বিকীর্ণ হয় বলে রাস্তাঘাটে মানুষ চলাফেরা করতে অসহ্য যাতনা ভোগ করে। এই সময় হঠাৎ কালবৈশাখীর তাণ্ডব নৃত্য শুরু হয়। প্রবল ঝড় বাদল মানুষের জীবনকে বিপর্যন্ত করে। পল্লীগ্রামের দরিদ্র কৃষকদের ঘরবাড়ি অনেক সময় প্রবল ঝটিকা প্রবাহে উড়ে যায়; তখন তাদের দুঃখের সীমা থাকে না। গ্রীষ্মকালে উদ্যানের সারি সারি আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু প্রভৃতি ফলবান বৃক্ষ ফলসম্ভারে অপূর্ব শ্রীধারণ করে। কালবৈশাখীর ঝড়ে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের মধ্যে আম, জাম কুরাবার ধূম পড়ে যায়। অসহ্য গরমে মানুষের প্রাণ হাপিয়ে উঠে, সকলেই ব্যগ্র ব্যাকুল হয়ে বর্ষার অপেক্ষায় থাকে। এই সময়ে হৈমন্তিক ধানের অঙ্কুর উদ্‌গম হয়। এর পর ধূলিরুক্ষ মাঠে-ঘাটে, পথে প্রান্তরে বর্ষার পদধ্বনি শোনা যায়। গ্রীষ্মের খররৌদ্রের যে দাহ মানুষের জীবনকে ক্লান্ত ও পঙ্গু করে ছিল বর্ষার সজল বারি বর্ষণে তা দূর হয়ে যায়, তাপদগ্ধ মানুষের মুখে হাসি ফুটে।

বর্ষার সমারোহ : গ্রীষ্ম ঋতুর পর বর্ষার সাড়ম্বর আগমনে বাংলাদেশের প্রকৃতি এক অভিনব রূপ পরিগ্রহ করে। রৌদ্র-দগ্ধ তৃষ্ণাতুর ধরণীর বুক সুন্নিগ্ধ শ্যাম সমারোহে ভড়ে উঠে। নির্বিড় কৃষ্ণ নীরদের দল আকাশে ভেসে চলে। অবিরাম বর্ষণে খাল-বিল-নালা জলে পূর্ণ হয়। মরালের দল সানন্দে জলে সম্ভরণ করে, মাছেরা জলে মহা আনন্দে খেলা করে। কুমুদ, কার প্রভৃতি পুষ্পরাজি প্রস্ফুটিত হয় এবং বনের যূথী, কেয়া, কদম্ব ফুল ফোটে।

বর্ষার সমারোহে বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলগুলির মধ্যে যেন নবজীবনের সাড়া পড়ে। খাল-বিল, নদী-নালা সমস্ত জলে থৈ থৈ করতে থাকে। কোন কোন গ্রাম দ্বীপের মত জলের বুকে ভেসে থাকে। এই সময়ে নৌকা, ডিগ্রি, ভেলা প্রভৃতি ছাড়া চলাফেরা করা যায় না।

আকাশ ভেঙ্গে বিপুল বেগে বর্ষণধারা নামে-কুহুকেকার আনন্দ ধ্বনি জাগে। ঘরের বাইরে হওয়া যায় না। আকাশ নিবিড় অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে যায়। কখনও কখনও পূবালী বাতাস বইতে থাকে। রবীন্দ্রনাথ এই দৃশ্য দেখতে পেয়েছিলেন—

“বাদলের ধারা ঝরে ঝর ঝর

আউশের ক্ষেত জলে ভর ভর

কালিমাখা মেঘে ওপারে

আঁধার ঘনিয়াছে দেখ চাহিরে।

 

শরতের আগমন : এর পর ধীরে ধীরে বর্ষার অবসান ঘটে এবং শরৎ তার শুভ্র জ্যোৎস্না ও পুষ্প-সুষমা নিয়ে আগমন করে। বর্ষার নিপীড়িতা ধরণী আবার পুলকিত হয়ে উঠে। এই সময় বর্ষার ঘনকৃষ্ণ জলদের পরিবর্তে জলহারা অভ্র মেঘ ইতস্তত আকাশে ভেসে বেড়ায়। রাত্রিকালে শারদ-শশীর উজ্জ্বল কিরণে পথ-ঘাট প্লাবিত হয়ে অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে। শশীর উজ্জ্বল কিরণে কি কাশবন, কি বনের বৃক্ষশীর্ষ, কি গৃহচূড়া, কি নদীর নির্জন বক্ষ সমস্তই হাস্যময়ীরূপ ধারণ করে। শরৎকালে শেফালী, কামিনী প্রভৃতি ফুল প্রস্ফুটিত হয়ে সৌন্দর্য সৌরতে সকলকে মুগ্ধ করে। শিশিরধৌত উজ্জ্বল- শারদ প্রভাতে ঝরা শেফালীর গ্রি-মণির সুবাস চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। শরতে মৃদুমন্দ হাওয়া ফুটন্ত পুষ্পের স্নিগ্ধ সৌরত, নীল আকাশ তলে দিগন্ত বিস্তৃত বন্যাধারা মনকে উদাস করা ভোলে। এই সময় কৰি পেয়ে ওঠে

“এবার অবগুণ্ঠন খোল

গহন মেঘ-মায়ায় বিজন বন ছায়ায়

তোমার আঁচলে অবগুণ্ঠন সারা হল

শিউলি সুরভি রাত বিকশিত জোছনাতে

মৃদু মর্মর গানে তব মর্মের বাণী বোলো।”

 

হেমন্তের আগমন : শরৎ বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গেই হেমন্তের আবির্ভাব। হিম কুয়াশা-জালে আশ্বিনের রৌদ্রোজ্জ্বল আকাশ ধূসর বর্ণ ধারণ করে। এই সময় হরিৎ শষ্যক্ষেত্রে ধীরে ধীরে হরিদ্রাবর্ণ ধারণ করে; তখন প্রকৃতির শোভা অপরূপ সুন্দর দেখায়। প্রকৃতি যেন আপন রূপে মুগ্ধ হয়ে নিশাকালে শিশিরবিন্দুচ্ছলে আনন্দাশ্রু বিসর্জন করে। হেমন্তের অবসান থেকে না হতেই শীতের আভাস পাওয়া যায়।

শীতের আগমন: হেমন্তের পর শুরু হয় শীতের পালা। শ্যামল প্রকৃতি যেন সহসা রুক্ষমূর্তি ধারণ করে। বৃক্ষরাজি প্রায় পত্রহীন বিবর্ণ হয়ে যায়। উত্তর দিক থেকে বাতাস বইতে থাকে। লেপ, চাদর ও গরম কাপড় মুড়ি দিয়ে সকলেই শীত থেকে রক্ষা পাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অন্যান্য শীতপ্রধান দেশের ন্যায় এখানকার শীত ঋতু তত অসহনীয় নয়। শীত মৌসুমে বাজারে নানারকম তরি-তরকারি দেখা যায়। মানুষের চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়ার সুবিধা হয়।

বসন্তের আগমন: অবশেষে ঋতুরাজ বসন্ত অনুপম নৈসর্গিক সৌন্দর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়। এই সময় নতুন পত্র-পুষ্পে, লতা-গুলো শীতের শ্রীহীনতা দূর হয়ে যায়। নানা প্রকার ফুল ফোটে এবং জাম-কাঁঠাল প্রভৃতি রসাল ফলের মুকুল বের হয়। মধুমক্ষিকা গুন্ গুন্ রবে ফুল থেকে মধু আহরণ করে। আম্র কাননের অভ্যন্তরে কোকিল সুমধুর কণ্ঠে ‘কুহু’ ধ্বনি করে সকলের মন প্রাণ চঞ্চল করে তোলে। বসন্ত ঋতুর দৃশ্য পরম প্রীতিদায়ক এবং উপভোগ্য।

উপসংহার: এইভাবে বিভিন্ন ঋতুতে বৈচিত্র্যময় সৌন্দর্যের বিকাশে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দৃশ্যের মনোহারিত্ব বৃদ্ধি পায়। এখানকার ছয়টি ঋতুর প্রত্যেকটির যে নিজস্ব সৌন্দর্য সম্ভার রয়েছে তা বাংলাদেশের নিজস্ব সম্পদ। প্রত্যেক ঋতুতেই বাংলাদেশের মাঠ-ঘাট, বনভূমি ও বৃক্ষলতা রূপবৈচিত্র্যে রমণীয় হয়ে ওঠে।

 

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button