প্রাচীন রাজপ্রাসাদ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে পত্র লেখো
একটি প্রাচীন রাজপ্রাসাদের ভগ্নাবশেষে কিছুক্ষন কাটানাের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তােমার বন্ধুকে একটি পত্র লেখো।

প্রাচীন রাজপ্রাসাদঃ সকল ছাত্র ছাত্রীদের জন্য ভ্রমণ অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে পত্র শেয়ার করা হল- একটি প্রাচীন রাজপ্রাসাদের ভগ্নাবশেষে কিছুক্ষন কাটানাের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে তােমার বন্ধুকে একটি পত্র লেখো।
প্রাচীন রাজপ্রাসাদ ভ্রমণের অভিজ্ঞতা জানিয়ে বন্ধুকে পত্র লেখো
শিমুলতলা
কালিয়াগঞ্জ
১৫ এপ্রিল, ২০২০
প্রিয় অঞ্জন,
কয়েক দিনের জন্য মা-বাবার সঙ্গে বীরভূমে বেড়াতে গিয়েছিলাম। আজই বাড়ি ফিরেছি। এই কদিনের মধ্যে বীরভূমের অনেক জায়গায় ঘুরেছি। আমাদের ভ্রমণসূচির সবশেষে ছিল তারাপীঠ। তারাপীঠে আমরা যে হােটেলে উঠেছিলাম সেই হােটেলের ম্যানেজার কথায় কথায় আমাদের বললেন, আপনারা ইচ্ছে করলে একবার ভদ্রপুর ঘুরে আসতে পারেন। ভদ্রপুর মহারাজ নন্দকুমারের জন্মস্থান। এখনও সেখানে তার প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে। ভদ্রপুর এখান থেকে এমন কিছু দূরে নয়।
ইতিহাসের গন্ধ পেলেই আমার মন সেখানে ছুটে যেতে চায়। মহারাজ নন্দকুমার সম্পর্কে আমি দু-একটা লেখা পড়েছি। শুনেছি ভদ্রপুরের কথাও। সেই ভদ্রপুরের কাছে এসে ফিরে যাব, তা কী হয়! বাবাকে আমার ইচ্ছার কথা বলতেই বাবাও রাজি হয়ে গেলেন। ঠিক হল এখান থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে দুপুরে ভদ্রপুর পৌঁছব, তারপর ওখান থেকে চলে আসব সােজা রামপুরহাট স্টেশনে।
দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ আমরা ভদ্রপুরে পৌঁছলাম। প্রথমেই ওখানকার বিখ্যাত কালীমন্দিরটি দেখে নিয়ে আমরা গেলাম মহারাজ নন্দকুমারের প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ দেখতে। প্রাচীন রাজপ্রাসাদের সবই প্রায় ভেঙেচুরে গেছে, তবু এই ভগ্ন অবস্থা থেকেও প্রাসাদের স্থাপত্যকলার পরিচয় পাওয়া যায়। ধ্বংসস্তুপের চারপাশ ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। যত্রতত্র ছড়িয়ে রয়েছে ভাঙা ইটের টুকরাে। কোনাে কোনো জায়গায় দেওয়ালের কিছু কিছু অংশ অক্ষত, কোথাও বা তা স্তুপ মাত্র। কোথাও ভিতের ফাটল থেকে উঠে এসেছে বট বা অশ্বথ। আমার বাবা-মা একটি গাছের ছায়ায় বসেছিলেন।
ধ্বংসাবশেষের চারপাশে কিছুক্ষণ ঘােরার পর আমিও একটি বাঁধানাে ধাপের উপরে বসলাম। মহারাজ নন্দকুমারের ভগ্ন প্রাসাদের একটি প্রান্তে বসে বসে কত কথাই না মনে আসছিল। সে আজ কতদিন আগেকার কথা, নন্দকুমারের তখন কত ঐশ্বর্য কত প্রতাপ। দিল্লির বাদশাহ তাকে ‘মহারাজ উপাধিতে ভূষিত করেন। যে-প্রাসাদ আজ ধ্বংসাবশেষ মাত্র সেই প্রাসাদ একদিন পাত্রমিত্র, লােকলস্কর, দাসদাসীতে পরিপূর্ণ ছিল। ছিল কত মানুষের আনাগােনা, কত না জল্পনাকল্পনা। একটু দূরে যেখানে একটা বড় হলঘরের মতাে ছিল বলে মনে হচ্ছে, ওখানে বােধহয় দরবার বসত। নাকি ওটাই ছিল জলসাঘর ? যাই থাকুক না কেন, আজ আর সেসবের কোনাে অস্তিত্ব নেই। সমস্তই আজ স্মৃতিমাত্র। বারবার মনে পড়ছিল রবীন্দ্রনাথের সেই বিখ্যাত লাইন, কালস্রোতে ভেসে যায় জীবন যৌবন ধনমান। সত্যিই কালের চল স্রোতে সবই বিলীন হয়ে যায়। মহারাজ নন্দকুমারের এই প্রাসাদই তার বড় প্রমাণ। এইরকম কত দেশে কত রাজার প্রাসাদই না ধ্বংসভূপে পরিণত হয়েছে। মনে পড়ছিল আমাদের পাঠ্য ওরা কাজ করে’ কবিতার পঙক্তি-
রাজছত্র ভেঙে পড়ে, রণডঙ্কা শব্দ নাহি তােলে;
জয়স্তম্ভ মূঢ়সম অর্থ তার ভােলে।
এইভাবে নানান কথা ভাবতে ভাবতে কতক্ষণ বসেছিলাম জানি না। হঠাৎ চমকে উঠলাম বাবার হাতের স্পর্শে। বাবা আমার কাঁধে হাত রেখেছেন। বলছেন, চলাে আর দেরি করলে চলবে না। আমাদের ‘গণদেবতা এক্সপ্রেস ধরতে হবে।
অঞ্জন, আমি যখন মহারাজ নন্দকুমারের সেই প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ থেকে উঠে এলাম তখন সত্যি বলছি, আমার সমস্ত চেতনাকে আচ্ছন্ন করে দিয়েছিল এক অদ্ভুত ঔদাস্যপূর্ণ বিষন্নতা। ট্রেনে উঠেও সেই ঘাের কাটেনি। বাড়ি ফিরে এসেই তােকে আমার এই অনুভূতির কথা জানালাম। বলতে পারিস, না জানিয়ে পারলাম না। ভালাে থাকিস। তাের চিঠি পেলে ভালাে লাগবে।
ইতি
তাের দেবাশিষ
প্রেরক,
দেবাশিষ সরকার |
প্রপক,
অঞ্জন দাস ৭৩৩৭৩২ |
সোর্স – দেবাশিষ সরকার, ঢাকঢোল উচ্চ বিদ্যালয়
এটিও পড়ুন – খারাপ ও কম সারাঞ্জম দেওয়ার জন্য বিডিও সাহেবকে অভিযোগ পত্র
ট্যাগঃ প্রাচীন রাজপ্রাসাদ, প্রাচীন রাজপ্রাসাদ সম্পর্কে বর্ণনা।