উৎসবপূজার দিন ও তারিখ

2024 বাংলা নববর্ষ সময় নির্ঘণ্ট ও ক্যালেন্ডার – ১ লা বৈশাখ 1431

বাংলা নববর্ষের তারিখ ও ক্যালেন্ডার, শুভ নববর্ষ ১৪৩০

পয়লা বৈশাখ বা পহেলা বৈশাখ (বাংলা পঞ্জিকার প্রথম মাস বৈশাখের ১ তারিখ) বঙ্গাব্দের প্রথম দিন, তথা বাংলা নববর্ষ। দিনটি সকল বাঙালী জাতির ঐতিহ্যবাহী বর্ষবরণের দিন। দিনটি বাংলাদেশ এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গে নববর্ষ হিসেবে বিশেষ উৎসবের সাথে পালিত হয়। ত্রিপুরায় বসবাসরত বাঙালিরাও এই উৎসবে অংশ নিয়ে থাকে। সে হিসেবে এটি বাঙালিদের একটি সর্বজনীন লোকউৎসব হিসাবে বিবেচিত।

সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বার মাস অনেককাল আগে থেকেই পালিত হতো। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হতো গ্রেগরীয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। সৌর বছরের প্রথম দিন আসাম, বঙ্গ, কেরল, মনিপুর, নেপাল, উড়িষ্যা, পাঞ্জাব, তামিল নাড়ু এবং ত্রিপুরার সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে অনেক আগে থেকেই পালিত হত। এখন যেমন নববর্ষ নতুন বছরের সূচনার নিমিত্তে পালিত একটি সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে, এক সময় এমনটি ছিল না। তখন নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ আর্তব উৎসব তথা ঋতুধর্মী উৎসব হিসেবে পালিত হত। তখন এর মূল তাৎপর্য ছিল কৃষিকাজ, কারণ প্রাযুক্তিক প্রয়োগের যুগ শুরু না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের ঋতুর উপরই নির্ভর করতে হত

এটিও পড়ুন – 2025 বাংলা নববর্ষ সময় নির্ঘণ্ট ও ক্যালেন্ডার – ১ লা বৈশাখ

আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়। পরবর্তীকালে ১৯৬৭ সনের পূর্বে ঘটা করে পহেলা বৈশাখ পালনের রীতি তেমন একটা জনপ্রিয় হয় নি।

গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জি অনুসারে বাংলাদেশের প্রতি বছর ১৪ই এপ্রিল এই উৎসব পালিত হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক নির্ধারিত আধুনিক বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে এই দিন নির্দিষ্ট করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে চান্দ্রসৌর বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে ১৫ই এপ্রিল পহেলা বৈশাখ পালিত হয়।

2024 বাংলা নববর্ষ সময় নির্ঘণ্ট :

উৎসবের নাম দিন তারিখ
১লা বৈশাখ
 সোমবার  15 এপ্রিল, 2024

 

বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে – ১ লা বৈশাখ- সোমবার,  ১৪৩১

অন্যান্য পুজা- ১ লা বৈশাখ ছারাও এ দিন শ্রীশ্রী বাসন্তী পূজার সপ্তমী পুজা ।

202৩ বাংলা নববর্ষ কবে হয়েছিল

উৎসবের নাম দিন তারিখ
১লা বৈশাখ
 শনিবার ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে – ১ লা বৈশাখ- শনিবার ,  ১৪৩০

2022 বাংলা নববর্ষ কবে হয়েছিল

উৎসবের নাম দিন তারিখ
১লা বৈশাখ
শুক্রবার ১৫ এপ্রিল, ২০২২

বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে – ১ লা বৈশাখ- শুক্রবার,  ১৪২৯

2021 বাংলা নববর্ষ কবে হয়েছিল

উৎসবের নাম দিন তারিখ
১লা বৈশাখ
বৃহস্পতিবার ১৫ এপ্রিল, ২০২১

বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে – ১ লা বৈশাখ- বৃহস্পতিবার,  ১৪২৮

2020 বাংলা নববর্ষ কবে হয়েছিল

উৎসবের নাম দিন তারিখ
১লা বৈশাখ
মঙ্গল বার ১৪ এপ্রিল, ২০২০

বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে – ১ লা বৈশাখ- মঙ্গলবার,  ১৪২৭

২০১৯ বাংলা নববর্ষ  কবে হয়েছিল

উৎসবের নাম দিন তারিখ
১লা বৈশাখ
সোমবার ১৫ এপ্রিল, ২০১৯

বাংলা- ১ লা বৈশাখ- সোমবার, ১৪২৬

বাংলা নববর্ষ ঘিরে নানা কর্মকাণ্ড

ঐতিহাসিকদের মতে, পহেলা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগত হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সাথে সম্পর্কিত যা Vaisakhi (বৈশাখী ) ও অন্য নামে পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে এই উৎসব পালিত হয়। এই Vaisakhi-কে Baisakhi উচ্চারণও করা হয়। হিন্দু ও শিখগণ এই উৎসব পালন করে। এই উৎসব শোভাযাত্রা, মেলা, পান্তাভাত খাওয়া, হালখাতা খোলা ইত্যাদি বিভিন্ন কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে উদযাপন করা হয়। বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শুভেচ্ছা বাক্য হল “শুভ নববর্ষ”। নববর্ষের সময় বাংলাদেশে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়। ২০১৬ সালে, ইউনেস্কো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত এই উৎসব শোভাযাত্রাকে “মানবতার অমূল্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে ঘোষণা করে।

পশ্চিমবঙ্গে পহেলা বৈশাখ

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গে সারা চৈত্র মাস জুড়েই চলতে থাকে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। চৈত্র মাসের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তি বা মহাবিষুব সংক্রান্তির দিন পালিত হয় গাজন উৎসব উপলক্ষ্যে চড়ক পূজা অর্থাৎ শিবের উপাসনা। এইদিনেই সূর্য মীন রাশি ত্যাগ করে মেষ রাশিতে প্রবেশ করে। এদিন গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজিত হয় চড়ক মেলা। এই মেলায় অংশগ্রহণকারী সন্ন্যাসী বা ভক্তগণ বিভিন্ন শারীরিক কসরৎ প্রদর্শন করে আরাধ্য দেবতার সন্তোষ প্রদানের চেষ্টা এবং সাধারণ মানুষের মনোরঞ্জন করে থাকেন। পয়লা বৈশাখের দিন উল্লেখযোগ্য ভিড় চোখে পড়ে কলকাতার বিখ্যাত কালীঘাট মন্দিরে। সেখানে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ভোর থেকে মন্ত্রপাঠপূর্বক গঙ্গাস্নান করে প্রতীক্ষা করে থাকেন দেবীকে পূজা নিবেদন করে হালখাতা আরম্ভ করার জন্য। ব্যবসায়ী ছাড়াও বহু গৃহস্থও পরিবারের মঙ্গল কামনা করে দেবীর আশীর্বাদ প্রার্থনা করতে কালীঘাটে গিয়ে থাকেন। এইদিন বাঙালির ঐতিহ্যবাহী পোশাক হিসাবে নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি এবং শাড়ি পরার রেওয়াজ প্রচলিত।

বাংলা দিনপঞ্জীর সাথে হিজরী এবং খ্রিস্টীয় সনের মৌলিক পার্থক্য হলো হিজরী সন চাঁদের হিসাবে এবং খ্রিস্টীয় সন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। এ কারণে হিজরী সনে নতুন তারিখ শুরু হয় সন্ধ্যায় আকাশে নতুন চাঁদ দৃশ্যমান হওয়ার পর আর খ্রিস্টীয় সনে নতুন দিন শুর হয় ইউটিসি±০০:০০ অনুযায়ী। পহেলা বৈশাখ রাত ১২ টা থেকে শুরু না হয়ে সূর্যোদয় থেকে শুরু এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে, ঐতিহ্যগত ভাবে সূর্যোদয় থেকে বাংলা দিন গণনার রীতি থাকলেও ১৪০২ বঙ্গাব্দের ১ বৈশাখ থেকে বাংলা একাডেমী এই নিয়ম বাতিল করে আন্তর্জাতিক রীতির সাথে সামঞ্জস্য রাখতে রাত ১২.০০টায় দিন গণনা শুরুর নিয়ম চালু করে। সোর্স- উইকিপিডিয়া

বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে উৎসব ও মেলাঃ

  • মালদহ জেলার মানিকচক থানার ছােটধরমপুর গ্রামে ১লা বৈশাখ হইতে দুই দিন ব্যাপী বাশুলী দেবীর বার্ষিক উৎসব (সিরুয়া উৎসব) সাড়ম্বরে পালিত হয় এবং মাসাধিক কালব্যাপী চলে। ঐ জেলার জহরাতলা মন্দিরে ১লা বৈশাখ হইতে মাসব্যাপী উৎসব ও পূজা অনুষ্ঠান।
  • দক্ষিন দিনাজপুর জেলার হিলি থানার ত্রিকূল গ্রামে নববর্ষ উৎসব উপলক্ষ্যে প্রতি বৎসর চৌদ্দ হাত উচ্চ মৃন্ময়ী কালী মূর্তি গড়িয়া সাড়ম্বরে পূজা ও তিন দিন ব্যাপী উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।
  • বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুরে রাধাশ্যাম জীউর মন্দির প্রাঙ্গণে নিতাই-গৌর বিগ্রহের পঞ্চরাত্রিব্যাপী মহােৎসব।
  • বর্ধমান জেলার কালনা থানার অন্তর্গত গােপালদাসপুর গ্রামে রাখাল রাজের গােষ্ঠযাত্রা উৎসব।
  • দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলার মন্দিরবাজারের গ্রামে কেশবচন্দ্র রায় চৌধুরী প্রতিষ্ঠিত কেশবেশ্বর শিবমন্দিরে গােষ্ঠবিহার উৎসব ও মেলা।
  • পুরুলিয়া জেলার রঘুনাথপুর থানার অন্তর্গত সেনেরা গ্রামে নববর্ষ উৎসব ও হরিবাসর উৎসব।
এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button