পদ পরিবর্তন কী? 500+ পদ পরিবর্তন
পদ পরিবর্তন কাকে বলে বা পদান্তর কাকে বলে, পদ পরিবর্তন করার নিয়ম

অনুচ্ছেদ সমূহ
পদ পরিবর্তনঃ ব্যাকরণে, পদ হচ্ছে একটি ভাষার ভাষাগত বিভাগ যা সেই ভাষার বাক্যের নির্মাণ পদ্ধতি এবং শব্দের সনাক্তকরণ, বিশ্লেষণ, এবং অন্যান্য ভাষাগত গঠনের বর্ণনা করে। বাক্যে ব্যবহৃত প্রতিটি শব্দকেই এমন ভাবে বিভিন্ন শ্রেণীতে ভাগ করা যায়, যার জন্য প্রতিটি শব্দের মধ্যে সম্পর্ক এবং তাদের অর্থ সৃষ্টি করে।
এককথায়- বাক্যে ব্যবহৃত শব্দকে পদ বলে। ভাব প্রকাশ করতে বাক্যে শব্দের শেষে -কে, -রে, -তে প্রভৃতি কতকগুলি চিহ্ন বা বিভক্তি যােগ করা হয়।
উদাহরণ -বালকেরা বিদ্যালয়ে যায়। এখানে এরা’ এবং ‘এ’ বিভক্তি যথাক্রমে বালক (+এরা) ও বিদ্যালয় (+এ) শব্দে যুক্ত হয়েছে। এই বিভক্তিগুলির অভাবে বাক্যটি যেন অসম্পূর্ণ মনে হবে। সাধারণত বিভক্তিযুক্ত হয়ে শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হয়। বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তিযুক্ত শব্দই হল পদ। বালক ও বিদ্যালয় বাক্যে ব্যবহৃত হওয়ার আগে শব্দ, কিন্তু বাক্যে ব্যবহৃত বিভক্তিযুক্ত ‘বালকেরা এবং বিদ্যালয়ে পদ। শব্দে বা ধাতুতে বিভক্তি যােগ করলে পদ গঠিত হয়। পদের দুটি অংশ-১) শব্দ বা ধাতু এবং (২) বিভক্তি।
বাংলা ব্যাকরণে পদ মূলত ২ প্রকার হলেও সাধারণ ভাবে পদ ৫ প্রকার। যথা: ১.বিশেষ্য ২.বিশেষণ ৩.সর্বনাম ৪.ক্রিয়া ও ৫.অব্যয়।
পদ পরিবর্তন কী? 500+ পদ পরিবর্তন
পদ পরিবর্তন কাকে বলে বা পদান্তর কাকে বলে
পদ পরিবর্তন করার নিয়ম
- বিশেষণ পদের সঙ্গে ত্ব/তা যোগ করলে বিশেষ্য পদ পাওয়া যায়। যেমন: সৎ > সততা, ঘন > ঘনত্ব।
- অন প্রত্যয়যুক্ত বিশেষ্যে পদ অন প্রত্যয়ের পরিবর্তে ত(ক্ত) /ইত প্রত্যয় যোগ করে বিশেষণ পাওয়া যায়। যেমন: গমন > গত, গ্রহণ > গৃহীত।
- কিছু বিশেষ্যে পদের সাথে উয়া প্রত্যয় যোগ করে বিশেষণ পদ পাওয়া যায়। গাছ+উয়া = গাছুয়া>গেছো।
- ষ্ণ্য প্রত্যয় যোগ করে বিশেষণ পদ থেকে বিশেষ্য পাওয়া যায়। যেমন: অধিক+ষ্ণ্য = আধিক্য।
- ষ্ণিক/ইক প্রত্যয় যোগে বিশেষ্য পদ থেকে বিশেষণ পদ পাওয়া যায়। যেমন: দর্শন+ষ্ণিক(ইক) = দার্শনিক। এক্ষেত্রে প্রথম স্বরটির বৃদ্ধি হয়। যেমন: উপনিবেশ>ঔপনিবেশিক, নিমিত্ত>নৈমিত্তিক। উ>ঔ এবং ই>ঐ হয়েছে।
- বিশেষ্যে পদের শেষে ‘অন’ প্রত্যয় থাকলে ‘অন’-এর পরিবর্তে ‘অনীয়’ দিলে বিশেষণ পদ হয়। যেমন: গ্রহণ>গ্রহণীয়, বর্জন>বর্জনীয়।
- অন প্রত্যয়ের বদলে তব্য অথবা য (ণ্যৎ, যৎ, ক্যপ্) প্রত্যয় যোগ করলেও বিশেষ্য পদ থেকে বিশেষণ পদ পরিবর্তন হয়। তবে ঐ শব্দগুলির মধ্যে কয়েকটি শব্দ বিশেষ্য পদ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। যেমন কর্তব্য, বাক্য, বাচ্য প্রভৃতি শব্দ বিশেষণ পদ হলেও বর্তমানে বিশেষ্য অর্থে ব্যবহার হচ্ছে।
- তদ্ভব ও দেশি শব্দে উয়া প্রত্যয় যোগে বিশেষণ পদ পাওয়া যায়। তবে উয়া প্রত্যয়টি মান্য চলিত ভাষায় অভিশ্রুতির ফলে নতুন রূপ লাভ করে। যেমন: মাঠ+উয়া=মাঠুয়া>মেঠো, ঘাট+উয়া=ঘাটুয়া>ঘেটো।
- √ধা ধাতু থেকে তৈরি বিশেষ্য পদ থেকে বিশেষণ পদ পরিবর্তন করা হলে ধ ব্যঞ্জনটি হ-তে রূপান্তরিত হয়। যেমন: বিধান>বিহিত, আধানা>আহিত।
- ষ্ণ্য প্রত্যয় যোগ করে বিশেষণ পদ থেকে বিশেষ্যে পরিবর্তন করা যায়। যেমন: সুজন+ষ্ণ্য = সৌজন্য। এই ক্ষেত্রেও স্বরের বৃদ্ধি হয়।
পদ পরিবর্তন কী? 500+ পদ পরিবর্তন
বিশেষ্য | বিশেষণ |
ঘর | ঘরােয়া |
ব্যবধান | ব্যবহৃত |
ভূগােল | ভৌগােলিক |
অণু | আণবিক |
মরসুম | মরসুমী |
অনাদর | অনাদৃত |
অর্থতা | আর্থ |
বিনাশ | বিনিষ্ট |
ঋষি | আর্য |
কাগুজে | কাগজ |
গাঁ। | গেঁয়াে। |
কাঠ | কেঠো |
কাজ | কেজো |
ঢাক | ঢাকাই |
দরদ | দরদি |
দুঃখ | দুঃখিত |
কায়া | কায়িক |
অর্থ | আর্থিক |
হৃদয় | হৃদ্য |
ছুঁচ | ছুঁচালাে |
ভাব | ভাবুক |
সর্বনাশ | সর্বনাশা |
ফেন | ফেনিল |
হিম | হিমেল |
ক্ষয় | ক্ষীণ |
দাঁত | দাঁতাল |
আঘাত | আহত |
সূর্য | সৌর |
ব্যবহার | ব্যবহৃত |
বিজয় | বিজিত |
ভােগ | ভুক্ত |
আদিষ্ট | আদেশ |
ক্ষমা | ক্ষোভ |
ঘা | ঘেয়াে |
গাছ। | গেছাে |
খেয়াল | খেয়ালি |
ভাের | ভােরাই |
কোণ | কোণে। |
জটা | জটিল |
ইহ | ঐহিক |
গিরি | গৈরিক |
বাণিজ্য | বাণিজ্যিক |
পেট | পেটুক |
গঙ্গা | ভূতুরে |
গঙ্গা | গাঙ্গেয় |
বায়ু | বায়বীয় |
সুনীতিকুমার চট্টাপাধ্যায় এর মতে “যাহ্য নামশব্দ বা ধাতুর উত্তর যুক্ত হইয়া পদ গঠন করে তাহাকে বলে বিভক্তি।” পরের পোষ্টে বিভক্তি কি এবং কত প্রকার বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করা হয়েছে।