ছুটির দিন প্রবন্ধ রচনা

অনুচ্ছেদ সমূহ
ছুটির দিন রচনা শেয়ার করা হল। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় এরকম ধরনের প্রবন্ধ রচনা আসে। সকল ছাত্র ছাত্রীদের আশা করি কাজে আসবে।
ছুটির দিন
ভূমিকা:
সে দিনটি ছিল সোমবার। ভোর হতে দেখলাম আকাশে ঘন মেঘে আচ্ছন্ন হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি এসে গেছে প্রায়। কলেজে সেদিন কঠিন বিষয় ক্লাস ছিল। কিন্তু মন আমার কিছুতেই আজ আর পড়াশুনার দিকে টানছে না। মনে মনে ভাবছিলাম নির্দিষ্ট তালিকাভুক্ত ছুটি ভোগ করা আর আবদ্ধ পশুকে শিকার করা একি কথা। আজকের দিনটি আমার সেই নির্দিষ্ট তালিকার বাইরে। কিন্তু বাড়িতে কি কারণ দেখিয়ে কলেজে যাওয়া বন্ধ করবো ভাবছি; এমন সময় কাগজের হকার প্রতিদিনের মতো কাগজ দিয়া গেল। দেখলাম প্রথম পৃষ্ঠায় লেখা আছে যে, শিক্ষা বিভাগের নির্দেশ অনুসারে বাংলাদেশের সমস্ত স্কুল-কলেজ আজ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বাংলাদেশ ফুটবল দল এশিয়ান প্রতিযোগিতায় জয়লাভ করায় এইদিনটি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আনন্দের একটা বিদ্যুৎ চমকাল আমার মনের মধ্যে খেলে উঠলো। আমি তো ঠিক হতে চেয়েছিলাম। তাই নির্দিষ্ট তালিকার বাইরে এই ছুটির দিনটি অনেক দিন পর্যন্ত মনে থাকবে।
ছুটির দিনের অর্থ :
ইংরেজীতে এই ছুটির দিনগুলিকে “Holiday” অর্থাৎ পবিত্র দিন বলা হয়। আমি জানি ছুটির ব্যাপারে ধর্মের হাত সবচেয়ে বেশি। -আমাদের দেশের মুসলমান, হিন্দু, খ্রীষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকদের ধর্মীয় উৎসবের দিনই ছুটি ঘোষণা করা হয়। সেই দিনগুলি পবিত্র। প্রতিদিনের সংসারের স্বার্থচিন্তা ও কর্মজাল থেকে আমাদের মুক্ত করে দিয়ে আত্মাকে ধর্মচিন্তা ও আধ্যাত্মিক পুণ্যক্ষেত্রে ডেকে আনা ছুটিগুলির উদ্দেশ্য।
ছুটির রকম ফের:
আবার আর এক রকম ছুটিও আছে যা প্রতিদিনের কর্মপ্রচেষ্টা থেকে অবকাশমাত্র। ক্লান্ত ও শান্ত দেহ-মন যাতে আবার নতুনভাবে কাজে নিযুক্ত হতে পারে, তারই জন্য প্রস্তুতি ঐ সব ছুটির দিনে হয়ে থাকে। কেউবা মনে করেন স্কুল-কলেজের শিক্ষাই আমাদের পক্ষে যথেষ্ট নয়। তাই সামাজিক ও অন্যান্য প্রত্যক্ষ শিক্ষার জন্য এইসব অবকাশের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। কারণ, এইসব অবকাশের দিনে আমরা দেশ-বিদেশে ঘুরতে পারি, বিভিন্ন জনসমাজের সঙ্গে পরিচিত হতে পারি এবং আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সুযোগ পাই। চারদিকে কেবল প্রয়োজনের জাল ছড়িয়ে রয়েছে। প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে মানুষের আত্মার যে আনন্দ তাতে যেন অধিকার আমার নেই ।
কিন্তু আজকের ছুটি আমার সমস্ত প্রয়োজনের অতীত- কেবল অকারণ আনন্দের জন্য। বাইরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম টিপ্ টিপ্ করে বৃষ্টি পড়িতে শুরু করছে। আমার ঘরের জানালার সামনে লোকজন নেই। সকলেই ঘরে ফিরেছে। মনে হল সমস্ত কর্ম-চাঞ্চল্যের অবসান ঘতেছে।
বৃষ্টি জোরে আসছে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে দিলাম। আলো জ্বালাতেই ঘরের মধ্যে এক কৃত্রিম রাত্রির সৃষ্টি হল। সমস্ত জগৎ সংসার থেকে আমি যে বিচ্ছিন্ন তা যেন নতুন করে অনুভব করলাম। বিছানার কাছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্রা’ কাব্যটি পড়ে ছিল। বিছানায় বসে ‘জ্যোৎস্না রাত্রে’ কবিতাটি পড়তে লাগলাম।
“শান্ত করো, শান্ত করো এ ক্ষুব্ধ হৃদয়
হে নিস্তব্ধ পূর্ণিমা যামিনী। অতিশয়
উদভ্রান্ত বাসনা বক্ষে করিছে আঘাত
বারম্বার তুমি এসো স্নিগ্ধ অশ্রুপাত
দণ্ড বেদনার পরে। শুভ্র সুকোমল
মোহভরা নিদ্রাভরা করপদ্মদল,
আমার সর্বাঙ্গে মনে দাও বুলাইয়া
বিভাবরী, সর্ব ব্যথা দাও ভুলাইয়া
বহু দিন পরে আজি দক্ষিণা বাতাস
প্রথম বহিছে। মুগ্ধ হৃদয় দুরাশ
তোমার চরণ প্রান্তে রাখি তপ্ত শির
নিঃশব্দে ফেলিতে চাহে রুদ্ধ অশ্রুনীর
হে যৌন রজনী।’
স্বপ্ন-দর্শন:
কিছুক্ষন পড় এক সময় কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম জানি না। ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখলাম আমি যেন কোন দূর-দূরান্তের এক অজানা রাজ্যে চলেগেছি। পথে যে সমস্ত লোকজনের সঙ্গে দেখা, তারা সকলে অপরিচিত কিন্তু কেউ আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করল না। আমি আমার মতো হাঁটতে লাগলাম। হাটতে হাটতে অবশেষে একটি ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘরের মধ্যে এসে দেখলাম একজন দরিদ্র ভিখারী, সেই ঘরের মধ্যে শীতে কাপছে। তার গায়ে ছাড়া কাপর শীত থেকে বাঁচার জন্য এটাই তারকাছে আছে। এই দুঃখী লোকটির দিকে তাকিয়ে আমি কেদে ফেললাম। চোখের জলে আমার জামা ভিজে গেল। প্রশ্ন করতেই ভিখারী ভয়ে চিৎকার করে উঠল। সেই মর্মভেদী ক্রন্দনে আমি চমকে গিয়ে উঠলাম। জেগে দেখি ঘরের চালার ছিদ্র দিয়ে জল পড়ে আমার বিছানা ভিজে গিয়েছে, মা রেগে দরজার বাইরে আমাকে উচ্চৈঃস্বরে ডাকছেন।
লাফিয়ে উঠে দরজা খুলে দিতেই মা আমাকে এই দিনের বেলায় ঘুমানুর জন্য বক্তে লাগলেন এবং আমি কেন কলেজে যাইনি তার কারণ জিগ্যেয়া করলেন। বাইরে বৃষ্টি থেমে গেছে। ছুটির কথা মাকে জানালাম। মা তখন পড়াশুনা করতে বললেন। হায়রে পড়াশুনা! আমার হেত সুন্দর ছুটির দিনটিতেও আমার এই দূরদশা