রূপচর্চাস্বাস্থ্য

চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার এর সঠিক উপায়

চুলের বিভিন্ন সমস্যা এবং প্রতিকার সঠিক উপায়

সৌন্দর্য বারাতে চুলের ভূমিকা অপরিসীম। চুল সৌন্দর্যের এক অলংকার স্বরূপ। চুল নিয়ে আমরা অনেক সমস্যার সম্মুখীন হই তাই চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার সঠিক উপায় নিয়ে আজকের লেখা। রেশমি ঘন কালো চুলে মুগ্ধ হয়ে কত লেখক, কবি সাহিত্যিক কত যে গান ,কবিতা রচনা করেছেন তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তাই চুল এক ধরনের সম্পদ।

অন্তস্ত্বক বা ত্বকের বহিঃস্তরে অবস্থিত ফলিকল থেকে উৎপন্ন চিকন লম্বা সুতার মতোন প্রোটিন তন্তু। শুধুমাত্র স্তন্যপায়ী প্রাণীর শরীরে পাওয়া যায় বলে চুল স্তন্যপায়ী প্রাণীর একটি নির্দেশক বৈশিষ্ট্য। চুলের প্রধান উপাদান হচ্ছে কেরাটিন।

চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার সঠিক উপায়

খুসকি : খুসকি চুলের বিভিন্ন সমস্যাগুলির মধ্যে একটি অন্যতম সমস্যা। সব ধরনের চুলেই খুসকি হতে পারে। চুলের গোড়ায় যে সমস্ত কোষ থাকে সেগুলি পূর্ণবয়স্ক হওয়ার | আগেই মারা যায়। এই মরা কোষগুলিই হল খুসকি। খুসকিতে মাথা প্রচণ্ড চুলকোয়। বেশী | চুলকোনোর ফলে মাথায় ঘা হয়ে যায়। চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানোর সময় এই মরা মাস উঠে গুঁড়ো হয়ে ঝরে পড়ে। খুসকি বেশী হলে চুল শুকনো দেখায়। খসখসে হয়ে যায়। অতিরিক্ত চুলকোয়। চুলে জট সৃষ্টি হয়। চুল আঁচড়ালে উঠে যায়। খাদ্যতালিকায় খাদ্যের অভাব, অতিরিক্ত চিন্তা, মানসিক চাপ, হরমোনের কম বেশী নিঃসরণ, রোগজনিত জীবাণুর আক্রমণ ও অতিরিক্ত রাসায়নিক যুক্ত কসমেটিক্সের ব্যবহারের ফলে খুসকি হয়।

দু-ধরণের খুসকি হয়।

  • শুকনো খুসকি এবং
  • তৈলাক্ত খুসকি।

চুলের শুকনো খুসকি ( চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার ) :

শুকনো খুসকি বাতাসের মধ্যে কনার আকারে ভেসে বেড়ায়। এই খুসকি মাথায় চেপে বসে থাকে না। চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে মাথায় ভেসে ওঠে। শুষ্ক চুলে এই খুসকি বেশী দেখা যায়।

এটিও জেনে নিন – শর্ট লিঙ্ক করে ইনকাম মাসে 10000 হাজার টাকা আয় করার পদ্ধতি

চুলের তৈলাক্ত খুসকি (চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার ):

তৈলাক্ত খুসকি চোখে দেখা যায় না। হলুদ বর্ণের এই খুসকি মাথায় আটকে থাকে। চুল আঁচড়ালেও ওঠে না। চুলে খুব দুর্গন্ধ হয়। এই খুসকির ফলে ব্রণও হয়।

শীতকালে খুসকি বেশী হয়। এই খুসকি বা মরামাস থেকে বাঁচতে প্রথমেই মাথাকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। তৈলাক্ত ত্বক হলে আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। চুলে তেল ম্যাসাজ করুন। ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ যুক্ত খাবার খান। শর্করা ও চর্বি জাতীয় খাদ্য কম খান। পেটের কোন গণ্ডগোল থাকলে তা তাড়াতাড়ি সারিয়ে ফেলুন। আস্তে আস্তে বেশী চাপ না দিয়ে চুল আঁচড়ান।

  •  কচি পেঁয়াজ থেতো করে তার রস বা শিউলি ফুলের শুকনো বীজ বেটে মাথায় হালকা করে গোড়া পর্যন্ত মেখে ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে নিন।
  • রাতে শোওয়ার সময় ২ চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে ১ চামচ লেবুর রস মিশিয়ে মাথায় মেখে নিন। ভালো করে আঙুলের ডগা দিয়ে ঘষে ঘষে লাগিয়ে পরের দিন সকালে শ্যাম্পু করে নিন।
  • ডিম ভালো করে ফেটিয়ে হলুদ অংশ অল্প গরম জলের সাথে মিশিয়ে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চুলের গোড়ায় লাগান ১৫/২০ মিনিট পর হালকা গরম জলে বা গরম-ঠাণ্ডা জলে মাথা ধুয়ে নিন।
  • জলে ১ চামচ বোরিক পাউডার মিশিয়ে ঐ জলে চুল ধুলে অল্পদিনেই খুসকি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
  • এক কাপ দইয়ের সঙ্গে ১ চামচ লবণ মিশিয়ে চুলের গোড়ায় লাগিয়ে কিছুক্ষণ পর শ্যাম্পু করে নিন। কিছুদিনের মধ্যেই খুসকি সেরে যাবে।
  • দই ও বেসন একসাথে মিশিয়ে তেল মাখার ঘণ্টা খানেক পরে মাথায় লাগিয়ে ২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ধুয়ে নিন।

চুলের ডগা ফাটা : (চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার )

নিয়মিত চুল না আঁচড়ালে এবং চুলের অযত্নে চুলের ডগা ফেউ যায়। এছাড়া অতিরিক্ত সূর্যের তাপে দিনের পর দিন লাল হতে হতে একসময় ডগা ফেটে যায়। এর হাত থেকে বাঁচতে বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার।

  • চুলের ডগা ফেটে গেলেই বুঝতে হবে চুলের প্রচণ্ড ক্ষতি হয়েছে। তাই ফাটা অংশ কেটে ফেলুন। জুল ডগা ফাটা অবস্থায় বেশিদিন রেখে দিলে তা গোড়া পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে চুল বেশী উঠে যাবে এবং ফাটা ডগার জন্য চুলের বৃদ্ধিও বন্ধ হয়ে যাবে।
  • ক্লোরিনযুক্ত জল প্রতিদিন ব্যবহারের ফলে চুলের ডগা ফেটে যায়। এক্ষেত্রে জল ফুটিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করুন। সবসময় কম ক্ষারযুক্ত শ্যাম্পু বা আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। রোদে বেরোলে সবসময় ছাতা ব্যবহার করুন।
  • তাড়াতাড়ি করে অনেকেই টেনে হিচড়ে চুল আঁচড়ান। তাতে চুল আরও বেশী পরিমাণে জট পড়ে যায়। জট পড়লে টানাটানির কারণে চুল ছিঁড়ে যায়। আর যে চুলগুলো ছেঁড়ে না সেগুলো নমনীয়তা হারিয়ে ফেটে যায়। তাই চুলকে কোমল ঝরঝরে সুস্থ রাখতে ধৈর্য্য সহকারে ধীরে ধীরে চুল আঁচড়ান।
  • শ্যাম্পু করার আগের দিন রাতে বা ১ ঘণ্টা আগে মাথায় নারকেল তেল গরম করে আঙুলের ডগা দিয়ে ঘষে ঘষে গোড়ায় ম্যাসাজ করুন। তারপর শ্যাম্পু করে চুল ধুয়ে নিন।
  • ভিজে চুল কখনো আঁচড়াবেন না। চুল উলটে ঘাড় থেকে ডগা পর্যন্ত ৫০ থেকে ১০০ বার প্রতিদিন চুল আঁচড়ান এতে চুলের ডগায় রক্ত সঞ্চালন বাড়বে।
  • ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ‘সি’ ট্যাবলেট খান।

চুল ওঠাঃ ( চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার )

চুল উঠে যাওয়া নারী-পুরুষ উভয়ের কাছেই বেদনা দায়ক। পুরুষের ক্ষেত্রে চুল উঠতে উঠতে টাকের পর্যায় গিয়ে পৌঁছয়। মেয়েদের ক্ষেত্রে চুল ওঠাতে সৌন্দর্য্যের কিছুটা হানি হলেও পুরুষের মত টাক পড়ে না। নানা কারণে চুল উঠতে পারে। খাদ্যে ভিটামিনের অভাবে, শরীরের ভিতরের কোন রোগ, ওষুধের প্রতিক্রিয়া, মানসিক চিন্তা, ভুল পদ্ধতিতে চুল ব্রাশ করা, চুল বেশী টানাটানি করা, ঠিকমত চুল না ধোওয়া, অতিরিক্ত শ্যাম্পু করা, চড়া রোদ লাগানো ইত্যাদি কারণে চুল ওঠে।

অতিরিক্ত চুল উঠলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে চিকিৎসা করান। এখানে কিছু চিকিৎসার কথা বলা হল এগুলি খুবই ফলপ্রদ।

  • চুলে হট অয়েল ম্যাসাজ করুন। নারকেল তেল, তিলের তেল, অলিভ অয়েল সমপরিমাণে মিশিয়ে গরম করে আঙুলের ডগা দিয়ে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করুন। তারপর হট টাওয়েল ১০ মিনিট জড়িয়ে রেখে, ১০ মিনিট পর চুলটা ভাল করে আঁচড়ে শ্যাম্পু করে নিন। আমলা তেলও ব্যবহার করতে পারেন।
  • চুল বেশী উঠলে শ্যাম্পুর বদলে আমলকী ব্যবহার করুন। চুল ওঠা বন্ধ হবে, সাথে চুল মসৃণ ও মোলায়েম হবে।
  • চুল যখন উঠতে শুরু করে তখন ধরে নিতে হবে চুল দুর্বল হয়ে পড়েছে। এসময় জোর জবরদস্তি, তাড়াহুড়ো, টানাটানি করে চুল বাঁধলে বা আঁচড়ালে চুলের আরও ক্ষতি হবে। তাই এসময় মোটা দাঁতের চিরুনি বা ব্রাশ দিয়ে জট ছাড়িয়ে ধীরে ধীরে চুল আঁচড়ান। এবং ঢিলে করে চুল বাঁধুন।
  • গরম জলে চুল ধোবেন না। শ্যাম্পু করার সময় বেশী রগড়াবেন না। টাওয়েল দিয়ে জোরে ঘষে ঘষে চুল মুছবেন না।
  • এক বালতি জলে ৪/৫ ফোঁটা ভিনিগার ফেলে চুল ধুলে উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া চুল খুব উঠলে মেহেন্দি, শিকাকাই, রীঠা, আমলা এই সব জড়িবুটির রস ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
  • পেট পরিষ্কার রাখুন। কোষ্টকাঠিন্য, বদহজম না হয় লক্ষ্য রাখুন। ভাজাভুজি, মশলাদার খাবার সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।

প্রোটিন ও ভিটামিন যুক্ত খাবার খান। দিনে ১০/১২ গ্লাস জল খান এবং ৮ ঘণ্টা ঘুমোন। রোদে ছাতা ব্যবহার করুন। মানসিক চিন্তা-উদ্বেগ থেকে আপনার মন ও মস্তিষ্ক মুক্ত রাখার চেষ্টা করুন। মাসে একবার হেনা করুন।

চুল পাকা ( চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার ) :

অকালে চুল পাকা প্রত্যেকের কাছেই একটা বড় সমস্যা। এর ফলে মুখের শ্রী-তো নষ্ট হয়ই বয়সও বেশী লাগে বিশেষত মেয়েদের। সাধারণতঃ পেটের গণ্ডগোল, দুশ্চিন্তা, উত্তেজনা, কঠোর পরিশ্রম, ভিটামিন ‘এ’ এবং ‘ডি’ এর অভাবে অসময়ে চুল পেকে যায়।

অকালে চুল পাকা ঘরোয়া উপায়ে প্রতিরোধ করুন।

  • শুকনো আমলকী চূর্ণ সামান্য জল দিয়ে পেস্ট কৈরী করে মাথায় লাগিয়ে ১৫/২০ মিনিট পর ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে ফেলুন। কয়েকবার লাগালেই বেশ উপকার পাবেন।
  • পেঁয়াজের রস লাগালেও উপকার পাওয়া যায়।
  • আলুর খোসা সেদ্ধ করে সেই জল চুলে লাগান।
  • ১ চামচ আমলকীর রস, ১ চামচ হেনা পাউডার ও ১ চামচ চা পাতা একসঙ্গে একটি বাটিতে রেখে জল ঢেলে গরম করুন। সামান্য গরম হওয়ার পর মিশ্রণটি ৪-৫ ঘণ্টা ভিজতে দিন। মিশ্রণটি মাথায় ম্যাসাজ করার ২ ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
  • ২ চামচ নারকেল তেলে চামচ ভৃঙ্গরাজ ও ২ চামচ মেথি ভিজিয়ে মাথায় নিয়মিত মাথলে পাকা চুল কালো হবে।
  • আমলকী চূর্ণ লেবুর রসে মিশিয়ে পাকা চুলে লাগালে ধীরে ধীরে চুল কালো হয়ে যাবে।
  • ভিটামিন ‘এ’ ও ‘ডি’ যুক্ত পুষ্টিকর খাদ্য বেশী করে খান।
  • নিয়মিত যোগাসন করুন যোগবিদদের পরামর্শ নিয়ে। বংশগত কারণে চুল পাকলে ডাক্তার দেখান। মাসে দুবার হেনা করুন।

চুলের উকুন দূর করার উপায় (চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার ):

চুলের আর এক অন্যতম সমস্যা হল উকুন। উকুন এক ধরণের ক্ষুদ্র ছোঁয়াচে পোকা। এরা মাথার চুলে বাসা বেঁধে মাথার ত্বক থেকে রক্ত খেয়ে জীবন ধারণ করে। উকুনের ডিমকে নিকি বলে। নিকি চুলের সাথে আঠার মত আটকে থাকে। এটি মাথায় জন্মালে সবসময় মাথা চুলকোয় এবং দ্রুত একজনের মাথা থেকে অন্যের মাথায় চলে গিয়ে বংশবিস্তার করে। চুলের অযত্নের জন্য এবং অপরিষ্কার চুলে উকুন জন্মায়। আজকাল বাজারে নানারকম উকুনের ওষুধ পাওয়া যায়। সেগুলি ব্যবহার করুন। এছাড়া ঘরোয়া উপায়ে পরিচর্যা করুন।

  • ৪ চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে ২ চামচ ন্যাপথলিন গুঁড়ো মিশিয়ে তেলটা চুলের গোড়ায় লাগিয়ে একটি পাতলা নরম কাপড় মাথায় জড়িয়ে রাখুন। ১ ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
  • কর্পূর, পানের রস একসাথে মিশিয়ে মাথায় মাখুন।
  • ১ টা রিঠে ফল ৫ চামচ গরম জলে ভিজিয়ে পরের দিন মাথায় মেখে কিছুক্ষণ পরে শ্যাম্পু করুন।
  • তুলসী পাতার রসও খুব ভাল ঘরোয়া ওষুধ।
  • তিক্ত বাদামের পেস্ট মাথায় লাগালে খুব উপকার পাবেন।
  • চুল সমসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন।
  • সরু চিরুনি দিয়ে দিনে দুবার ভাল করে চুল আঁচড়ান।
  • সপ্তাহে ২/৩ বার শ্যাম্পু করুন।

ট্যাগঃ চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার, জেনে নিন চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার ,চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার এর সঠিক উপায়, চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার এর সঠিক উপায় PDF, চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার ঘরোয়া উপায় সহ, চুলের সমস্যা এবং প্রতিকার এর টিপস।

লেখা – নাবনিতা সাহা (কলকাতা)

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button