প্রবন্ধ রচনা

বাংলার লোকসাহিত্য প্রবন্ধ রচনা 600 শব্দের মধ্যে

লোকসাহিত্য কী? বাংলার লোকসাহিত্য সম্পর্কে বিস্তারিত

লোকসাহিত্য হলো এমন সাহিত্য যা একটি সমাজের লোকজনের জীবন, সংস্কৃতি, পর্বর্তীতা এবং উন্নতির সমস্ত দিক নিয়ে প্রবৃদ্ধি করে। এটি সাধারিত লোকের ভাষায় লেখা হয় এবং সাধারিত মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণ, ধার্মিক আবদ্ধতা, উৎসাহ, আশার মূলত মৌলিকভাবে বৈচিত্র্যমূলক হয়।

লোকসাহিত্যে আমরা বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি এবং জীবনযাত্রার বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে রয়েছে এমন কাহিনী, গান, গল্প, রূপকবিতা, শ্রুতি, নৃত্য, শৈলী, আচরণ ইত্যাদি পাব। এই সাহিত্যে মৌলিকতা, সহজতা, মানবিকতা এবং স্থানীয় সাংস্কৃতিক মৌলিকতা গুলি প্রকাশ পায়।

লোকসাহিত্যে যে ভাষার ব্যবহার হয়, তা সাধারিত লোকের বাস্তব জীবনের সাথে মিলে খায়। এটি সাধারিত লোকজনের ভাষা, উচ্চারণ, শব্দব্যবস্থা ইত্যাদির মৌলিকতা ও বৈচিত্র্য প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করে।

বাংলার লোকসাহিত্য

বাংলার লোকসাহিত্য একটি সমৃদ্ধ এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অংশ হিসেবে পরিচিত। বাংলার লোকসাহিত্যে রূপকবিতা, গান, গল্প, কাহিনী, নৃত্য, রূপচর্চা, আচরণ ইত্যাদির মধ্যে বিভিন্ন সৃষ্টিতে রয়েছে বৈচিত্র্য। এটি প্রাচীন থেকেই চলে এসেছে এবং আধুনিক সময়ে এও প্রসারিত রয়েছে।

বাংলার লোকসাহিত্যে গ্রামীণ জীবনের চিত্রণ, সংস্কৃতি, প্রকৃতি, পৌরাণিক গল্প, রমণী, বিভূতিভূষণের বাংলার প্রাচীন বীর কবি ও সাহিত্যিক গানের প্রধান দিকের সমাহার রয়েছে। বাঙালি লোকসাহিত্যে দরবার, বৌদ্ধ মত, বাউল সাধুদের জীবনধারা এবং ধর্মীয় উদ্দীপনা সাধারিত চিত্রণ করে থাকে।

বাংলা লোকসাহিত্যে প্রস্তুত সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, লালন ফকির, হুমায়ূন আহমেদ, শাংকর, বিভূতিভূষণ, সরতচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিদ্যাসাগর, মন্নাফ, জসীম উদ্দিন, কাজী আবদুল ওয়াস্সে, আবুল হাসান, প্রমথ চৌধুরী, জিতেন্দ্রনাথ ঠাকুর, তারাশঙ্কর, স্যারত চট্টোপাধ্যায়, বাঙালি লোকসাহিত্যে মহৎ যেতিষ্ঠ সাহিত্যিকদের কাজ প্রস্তুত থাকে।

একবিষয়ক লোকসাহিত্য অনুসন্ধান করতে, বাংলা লোকসাহিত্যের একটি কাছে স্বাগতপূর্বক অনুসন্ধান করতে পারেন বা স্থানীয় প্রদর্শনী এবং উৎসবে অংশ নিতে পারেন।

বাংলার লোকসাহিত্য রচনা 

ভূমিকা :

বাংলার আকাশ-বাতাস জুড়ে যে অপরূপ বর্ণবৈচিত্রের সমাবেশ এমন আর কোথায়ও দেখা যায় না। তার শ্যামল পল্লী শ্রী, পাখি-ডাকা ছায়া ঢাকা বনানী মানুষকে ভাবুক করে তোলে। প্রবহমান পদ্মা-যমুনা, মেঘনাধারা এখানে নতুন জগতের সৃষ্টি ও পুরাতন জগতকে ধ্বংস করে। বাংলায় আকাশে নিদাঘ রৌদ্রের নিষ্ঠুর দীপ্তি, আষাঢ়ের ঘন বর্ষার মেঘসভারের মধ্যে ঐশ্বর্য ও মহিমা এবং শ্রাবণের দিবারাত্র অবিরাম বর্ষণধারার সঙ্গীতে হৃদয়াবেগের প্রতিচ্ছবি; ষড়ঋতুর নৃত্যলীলা যাঁরা দেখেছেন তাঁরা জানেন যে কবি মানসের উৎস কোথায়। প্রকৃতির এই অপরূপ বৈচিত্র্য-সম্ভার পল্লীর মানুষকেও করে তুলেছে কবি। তারা হাল বাইতে বাইতে ভাটিয়ালী গান গেয়ে উঠে, নৌকা বাইতে বাইতে ভাটিয়ালী গান গায়। কাজে-কর্মে গানের সুর দিয়ে নিজেদের প্রকাশ করে। জীবনের ভাষ্যকার এরা। এদের গান, কবিতা ইত্যাদি দিয়ে যে সাহিত্য গড়ে উঠেছে তাই লোক সাহিত্য।

সংজ্ঞা :

ইংরেজী Folk Literature’ কথাটির বাংলা প্রতিরূপ হচ্ছে লোকসাহিত্য। কেউ কেউ একে বলে থাকেন ‘পল্লীসাহিত্য’ বা ‘গ্রাম্য সাহিত্য”। অসংখ্য অশিক্ষিত বা অর্ধশিক্ষিত নরনারীর রসপিপাসা মেটানোর জন্যই এর সৃষ্টি। এই লোকসাহিত্যের রচয়িতারা হচ্ছেন পল্লী-চাষী, মাঝি-মাল্লা, বৈরাগী, সুফীসাধক ও লোক কবিরা। সহজ সরল পল্লীর মানুষের অনাড়ম্বর ছবি ফুটে উঠেছে এই পরী কবিদের রচনায় ও সাহিত্যে। আধুনিক ভদ্রসমাজের রুচি সূক্ষ্মকলাবোধ ও শিল্প সৌন্দর্যের অভাব পরিলক্ষিত হতে পারে, কিন্তু আন্তরিকতায় এ সুসমৃদ্ধ। কৃত্রিমতার ছাপ কোথাও নেই। শহরের ভদ্র সমাজে সৃষ্ট সাহিত্যের উদ্ভব মূলত মানুষের মুখে মুখে। আধুনিককালে বাংলায় শিক্ষিত সমাজ এই সাহিত্যের সামান্য অংশমাত্র পুস্তকের পৃষ্ঠায় বন্দী করেছে; কিন্তু গ্রামের পথে, মাঠে, কুটিরে, নরনারীর মুখে মুখে পল্লীসাহিত্য অবাধে বিচরণ করত, সুতরাং এর লোকসাহিত্য নামকরণ যথার্থ বটে। কোকিল, দোয়েল, শ্যামা, পাপিয়ার কলতানে মুখর পল্লীবাসীদের প্রাণে গানের ফোয়ারা প্রবাহিত হয়। সহজ-সুন্দর সরল ভাষায় এরা নিজেদের প্রকাশ করেছেন।

যেমন :

যুবতী, ক্যান বা কর মন ভারী
পাবনা থ্যাহে আন্যে দেব ট্যাহা দামের মোটরী।

আমাদের সেরা সম্পদ কেন? বাংলাদেশে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ লোকসাহিত্য। যুগে যুগে গড়ে উঠেছে এ সাহিত্য লোকচক্ষুর অগোচরে। ভদ্র সাহিত্যের আসরে এর কোনদিন স্থান হয়নি; কিন্তু পল্লীর অসংখ্য নর-নারীর অন্তরে চলেছে এর রাজত্ব। এই লোকসাহিত্যের ভাণ্ডার নানা বিচিত্র ঐশ্বর্যে পূর্ণ এতে রয়েছে গান, পল্লী কিস্সা, ছড়া, ধাঁধা, কাহিনী, রূপকথা, আখ্যায়িকা আরও অনেক কিছু। পল্লীজীবনের তুচ্ছ ও ক্ষুদ্র জিনিসও এসব গানে ধৃত হয়েছে। বস্তুত মানব-মানবীর প্রেম-প্রীতি, সুখ-দুঃখ, হর্ষ-বেদনার অপূর্ব আলেখ্য এই লোকসাহিত্য।

কৃষক তার কৃষাণীর বা কোন যুবতীর মন পাওয়ার জন্য এই যে সহজ উপায় ঠিক করেছে তা’ তার সরল প্রাণের প্রতীক। দামী কাপড়ের দরকার নেই। এক টাকা দামের একটা মোটরী পেলেই হবে। শুধু এ নয়, পল্লীর নিরক্ষর চাষীরা মারফতী গানও রচনা করেছে।

মন আমার চিনির বলদ চিনি বয়, চিনি না চিনি,
ও! ভুলে কল্পিনা একদিন চিনির সাথে চিনাচিনি।
কার কি কুমন্ত্রণা পেলে
ঘোল খেতে চাও মাখন ফেলে
ওহে! বুঝবে মজা নোকরি গেলে
(তখন) সার হইবে শুধু কাঁদুনি।

উপরন্তু ছড়া, ব্রতকথা প্রভৃতির মাধ্যমে কত অপরূপ সৃষ্টি না এদের আছে। এগুলোতে তাদের জীবনের চাওয়া-পাওয়ার রূপটি ধরা পড়ে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যারা লালিত তাদের মনের গড়নেও তার ছাপ পাওয়া যায়। দু’টি ছড়ার উদাহরণ দিচ্ছি—

(১) যমুনাবতী সরস্বতী কাল যমুনার বিয়ে।
যমুনা যাবেন শ্বশুরবাড়ী কাজিতলা দিয়ে ।।

(২)  আয় বৃষ্টি ঝেপে
ধান দেব মেপে ।।
কচুর পাতায় হলদি।
আয় বৃষ্টি জলদি ৷৷

ব্রত কথাগুলোও অবহেলার বস্তু নয়। এই কথাগুলোর কতক গদ্যে, কতক গদ্যে ও পদ্যে, কতক শুধু পদ্যে লিখিত। বাংলা লোকসাহিত্যের ইতিহাসে রেভারেও লালবিহারী দের কথা স্মরণীয়। তিনি বহু লোককাহিনী, উপকথা প্রভৃতি উদ্ধার ক’রে যে বই লিখেছেন, তিনি তার নাম দিয়েছেন’ “Folk Tales of Bengal” এটি লাল বিহারী দের স্মরণীয় কীর্তি। তিনি এদেশে প্রচলিত বহু উপকথাকে তাঁর গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে শিক্ষিত ব্যক্তিদের কাছে তুলে ধরে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

ময়মনসিংহ ও পূর্ববঙ্গ গীতিকা :

লোকসাহিত্যে সর্বাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ সম্পদ ‘ময়মনসিংহ গীতিকা’ ও ‘পূর্ববঙ্গ গীতিকা।’ এখানে জীবনের একটা রূপের সাক্ষাৎ পাচ্ছি যা আমাদের মুগ্ধ করে। পল্লীজীবনের সহজ সুন্দর, স্বাভাবিক ও সরল জীবনের প্রতিচ্ছবি এখানে পাই। তাদের হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, ব্যথা-বেদনার আলেখ্য অতি স্পষ্টাক্ষরে ধরা পড়েছে। মলুয়া, চন্দ্রাবতী, নদের চাঁদের কথা সহজে ভুলবার নয়। নিজেদের চারপাশে দেখা জীবনের রূপই এঁকে দিয়েছেন, কোন পুঁথি ঘাটেননি। কোন কাল্পনিক নায়ক-নায়িকা সৃষ্টি করে নিজেদের ঠকাননি।

হেঁয়ালী :

‘হেঁয়ালী’ বা ‘শ্লোক’ বাংলাদেশে প্রচলিত। মুখে মুখে অনেকদিন থেকে এগুলো চলে আসছে। এদের মূল্যও কম নয়। কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি :

(১) আকাশ গুড় গুড় পাথর ঘাটা।
সাতশ’ ডালে দুইটি পাখা।

(চাঁদ ও সূর্য)

(২) বাগান থেকে বেরুল টিয়ে।
সোনার টোপর মাথায় দিয়ে।

উপসংহার :

এ সমস্ত যোনী সপ্তাহ করলে শিশু সাহিত্যের জন্য খুবই ভাল হয়। বাংলার লোকসাহিত্য তার অগণিত মূর্খ মানুষের ভাষা। তারা নিজেদের জীবন নিজেরাই করেছে। সারীগান, জারীগান, ভাটিয়ালী, ময়মনসিংহ গীতিকা, ছড়া, ব্রতরণা প্রভৃতির মধ্যে এর যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। নাগরিক মনের উল্লাসে একে অবহেলা করা চলে না। কেননা পল্লীর যথার্থ রূপ দেখতে চাইলে লোকসাহিত্যের সাহায্য ছাড়া উপায় নেই।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button