প্রবন্ধ রচনা

একটি পথের আত্মকাহিনী | রাস্তার আত্মকাহিনী

একটি পথের আত্মকাহিনী প্রবন্ধ রচনা

একটি পথের আত্মকাহিনী নিয়ে প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল। বিভিন্ন স্কুল , কলেজ পরীক্ষা এমন কি বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক পরীক্ষায় এরকম প্রবন্ধ রচনা আসতে দেখা যায়। আশা করি সকল ছাত্র ছাত্রীদের এই রচনাটি কাজে আসবে।  ইংরেজি প্রবন্ধ রচনা পড়তে চোখ রাখুন tipstweet.in ওয়েবসাইটে।

একটি পথের আত্মকাহিনী

ওগো পথিক। শোন, আমার কথা একটু দাঁড়াইয়া শোন। সময় নাই। আশ্চর্য! অমন ধুপ-ধাপ করিয়া চলিয়াছ আমারই বুকের উপর দিয়া আর আমার কথাটুকু শুনিবার মত অবসর হইবে না? শুনবে। আচ্ছা তবে শোন।

এই যে আজ তুমি হন্হন্ করিয়া চলিয়াছ, উঁচু-নিচু নাই, খাল-ডোবা নাই, সুন্দর একটানা খোলা পথ তোমাদের চলিবার জন্য। কিন্তু জান কি, এখানে কি ছিল দুই শত বৎসর আগে? এই জায়গাটা ছিল বনজঙ্গলে পূর্ণ একটা ছোট্ট গ্রাম-নাম তার সুতানটী। গ্রাম বলিতে দুই চারি ঘর লোকের বসতি মাত্র আর বন, কেবল বন। গ্রামের এক পাশে গোবিন্দপুর আর এক পাশে কালিকাক্ষেত্র বালীঘাট। তবু যাহা — হউক, সেই দুই গ্রামে দশ-পনের ঘর লোকের বসতি ছিল সুতানটীর পাশেই গঙ্গা জোয়ারের পানিতে ভরিয়া উঠিত কানায় কানায় আর সেই পানি জঙ্গলের আনাচে কানাচে, ডোবায় নালায় যাইয়া গড়াইয়া পড়িত। ঘন জঙ্গলের জন্য সূর্যের আলো মাটিতে যাইয়া পৌঁছাইতে পারিত না। ডোবার পানিতে ঝরা পাতা পড়িয়া পচিয়া উঠিত, আর তাই ইহা ছিল মশার নিরাপদ আশ্রয়। তাহার উপর চারিদিকের মাটি স্যাঁতসেঁতে, আধিব্যাধির অভাব ছিল না। বাঘ আর সাপের ছিল বাসস্থান। আর বাঘ অর্থে চিতা নয়, খাঁটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার! ইহাদের গোষ্ঠী-গোত্র অবশ্য এখন সকলেই সুন্দরবনে আশ্রয় লইয়াছে।

মোগল বাদশাহ শাজহাজানের তাড়া খাইয়া জব চার্নক ডেরা বাঁধিলেন সুতানটীর আধজলা তীরভূমিতে। তারপর সেই কুঁড়ে ঘর হইতে প্রস্তুত হইল কুঠি, কুঠি হইতে দুর্গ। এই দুর্গকে ঘিরিয়া গড়িয়া উঠিল ছোট শহর, দুর্গের চারিদিকে জনবসতি। ইহাই তোমাদের আধুনিক যুগের কলিকাতা। জনপদ গণ্ডির মধ্য দিয়া দুর্গে যাতায়াতের পথ তৈয়ারি হইল। সেই সময়ই আমার পত্তন হইয়াছিল। এই পাশে ক্ষীণকায় নালা পানি নিকাশের পথ। নালার ধার ঘেঁষিয়া বসিল খাড়া খাড়া ইট, তাহারই মাঝখানে খোয়া, সুরকি আর পানি জড়াইয়া পাথরের বোলার টানিয়া বসাইয়া দিল আমার বুকের উপরে। তখনও তোমাদের স্টীম রোলারের প্রচলন হয়

নাই। বড় বড় পাথর কুদাইয়া রোলার তৈয়ারি করা হইত-আকৃতি প্রায় এ যুগের রোলারের মতই, তবে অবয়বে ছোট। আর টানা হইত বলদের সাহায্যে। মাটি কাটিয়া, গর্ত খুঁড়িয়া, ধোঁয়া ছড়াইয়া, পানি ঢালিয়া যখন রোলার টানা শুরু হইল, ভয়ে আমার বুক তখন খড়ফড় করিয়া উঠিল। রোলারের টানে ব্যথায় আর্তনাদ করিয়া উঠিলাম। কিন্তু রোলারের টান শেষ হইলে আনন্দে আমার দেহময় ছড়াইয়া পড়িল; হাসিতে মুখ আমার রক্তিমাভ হইয়া উঠিল। এখনকার মত এমন বড় বড় • সাততলা-আটতলা না হইলেও নূতন ধরনের সুন্দর সুন্দর কত বাড়ি গড়িয়া উঠিল আমার দুইধারে, প্রত্যেক বাড়ির সামনে বাগান, বাগানে কত দেশী-বিদেশী কেয়ারী ফুল। আমি গৌরব বোধ করিতাম। আমার মনে হইত আমার পাশে আছে, তাই অত রূপ উহাদের। কিন্তু গরুর গাড়িগুলি যখন গড়গড় করিয়া চলিত আমার বুকের উপর দিয়া আর গরুর ধারাল খুরের আঘাতে আমার দেহ ক্ষত-বিক্ষত হইত, তখন মনটা আমার অপমানে বিষাইয়া উঠিত। কিন্তু কি করিব? বুক পাতিয়া যখন দিয়াছি, তখন এই ব্যথা, এই অপমান সহ্য করিতেই হইবে।

দিন চলিতে লাগিল। আমার দেহের নানা রকম ক্ষত পূরণ করিয়া নিরাময় করিয়া তুলিবার জন্য, অঙ্গসৌষ্ঠব রক্ষা করিবার জন্য চেষ্টার অবশ্য ত্রুটি হইত না কোন দিন : আমিও ভাবিতাম, পৃথিবী ক্ষয়ক্ষতি, মানুষের এত অত্যাচার সহ্য করে বলিয়াই সে ধরিত্রী মাতা, চিরযৌবনা। আমি সহ্য করিব মানুষের দেওয়া অপমান, অত্যাচার, হইব সর্বংসহা। কখনও কখনও রাজকর্মচারীদের বহুমূল্যের ঘোড়ার গাড়ি ছুটিয়া চলিত, কখনও সৈনিকদের দল সারিবন্দী চলিয়া যাইত পায়ে পায়ে বীরপদভরে। আমার তখন বড় অহঙ্কার হইত-বীরবাহী আমি।

তারপর কালের পরিবর্তন ঘটিল যুগে যুগে। শহরে জন সমাগম দ্রুত বৃদ্ধি পাইতে লাগিল। ছোট জীর্ণ শহর পরিণত হইল নগরে। এক সময় ইংরেজ বণিক গোষ্ঠীর সঙ্গে বিরোধ উপস্থিত হইল বাংলার নবাব সিরাজ-উদ্দৌলার কামানের গাড়ি, যুদ্ধসজ্জার সামগ্রী লইয়া এস্তব্যস্ত যাতায়াত শুরু হইল সৈন্যবাহিনীর আমারই বুকের উপর দিয়া। সৈন্যদের সদগুপদ ভরে আব গাড়ি-ঘোড়ার দাপটে আমার দেহ ক্ষত-বিক্ষত হইতে লাগিল। শেষে একদিন ইংরেজ বণিকের মানদণ্ড দেখা দিল রাজদণ্ডরূপে। ইংরেজরা এদেশ জয় করিয়া বসিল, আর কলিকাতা হইল তাহাদের রাজধানী।

কলিকাতার আয়তন ক্রমে বৃদ্ধি পাইতে লাগিল, আর বড় বড় সওদাগরী সেরেস্তার বিপুলাকার অট্টালিকা গড়িয়া উঠিতে লাগিল। আমার আয়তন বৃদ্ধি পাইল।

পানি নিকাশের যে পথ ছিল আমার দুই পাশে, তাহা বন্ধ হইয়া গেল। আমার বুকের ভিতর দিয়া প্রস্তুত হইল পানি নিকাশের পথ। কেবল কি তাই? অসংখ্য পাইপ কোনটা পানীয় জলের, কোনটা অপরিষ্কৃত পানির, কোনটা বা গ্যাসের দিকে চালিত হইয়াছে স্পঞ্জের মত, আমারই বুকের নিচে। বিজলীর অগণিত তার ছুটিয়াছে সেই পাইপগুলির পাশে। দুই ধারে বসিল বিজলীর বাতি, টেলিফোন আর গ্যাসের আলোর সীমাহীন থামের শ্রেণী। আমার বুকের রঙ বদল হইল। এখন পিচঢালা কাল বুকে উঠে আমার রৌদ্রতাপের তপ্ত নিশ্বাস, তাহাতে স্পর্শ করে রাত্রির মলয় বাতাস। আমার বুকের উপর দিয়া ছুটিয়া চলে আজ অগণিত মোটর, ঘোড়ার গাড়ি, রিকশা এমন কত যানবাহন আর লক্ষ লক্ষ মানুষ। কিন্তু আমার আনন্দ কত ইতিহাস আর অত্যাচার-অনাচারের সাক্ষী আমি পড়িয়া আছি সর্বংসহা ধরিত্রীর মত।

Article Send: Arpita Bose ( Barasat, West Bengal)

Tag: একটি পথের আত্মকাহিনী | রাস্তার আত্মকাহিনী, জেনে নিন একটি পথের আত্মকাহিনী | একটি রাস্তার আত্মকাহিনী, একটি পথের আত্মকাহিনী রচনা, একটি পথের আত্মকাহিনী প্রবন্ধ রচনা, একটি পথের আত্মকাহিনী পিডিএফ সহ, একটি পথের আত্মকাহিনী ৬০০ শব্দের মধ্যে।।

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button