প্রবন্ধ রচনা

জ্ঞানই শক্তি প্রবন্ধ রচনা

জ্ঞানই শক্তি রচনা সকল ছাত্র ছাত্রীদের জন্য

জ্ঞানই শক্তি: হ্যাঁ, জ্ঞান একটি অত্যন্ত শক্তিশালী সম্পদ যা একজন ব্যক্তিকে বিভিন্ন দিকে চলতে সাহায্য করতে পারে। জ্ঞান সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা হলো একটি ব্যক্তির জ্ঞান পরিমাপ এবং তার সম্পদ বিকাশের দক্ষতা নির্ধারণ করা। তবে আসলে জ্ঞান একটি বিশাল ধারণা যা সম্পূর্ণ মানব সভ্যতার বিকাশের পেছনের শক্তি হিসাবে পরিচয় করা হয়। জ্ঞান ব্যক্তিকে আরও উন্নয়ন করতে সাহায্য করে এবং তাকে আলোকিত করে দেয়। [জ্ঞানই শক্তি প্রবন্ধ রচনা]

জ্ঞানই শক্তি

‘Knowledge is Power’ বলে ইংরেজীতে যে উক্তিটি আছে তা গভীর তাৎপর্যবহ। সংসারে দুই প্রকার মানুষ বসবাস করে। এক প্রকারের মানুষ শিক্ষিত ও জ্ঞানী; সমাজে ও সংসারে তাদের আদরের সীমা নেই। পক্ষান্তরে, অন্য প্রকার মানুষ, মূর্খ ও অশিক্ষিত, সমাজে ও সংসারে তাদের কোন আদর নেই। যাঁরা শিক্ষিত তাঁরা মানমর্যাদা নিয়ে বাস করতে পারেন। তাঁদের সম্পর্কে একটি সংস্কৃত উক্তি আছেঃ

‘রাজন্ স্বদেশে পূজ্যতে, বিদ্বান সর্বত্র পূজ্যতে’।

অর্থাৎ রাজার মর্যাদা স্বদেশে মাত্র, পক্ষান্তরে জ্ঞানবান বা বিদ্বানের সম্মান দেশে-বিদেশে সমান। কারণ জ্ঞান মানুষকে মহিমান্বিত করে, সমাজ ও সংসারকে শ্রীমণ্ডিত করে তোলে। সমাজের সকল স্তরের মানুষ তাঁর সাথে মেলামেশা করে, সমাজে তাঁর প্রভাব অপরিসীম। লোকে বুদ্ধি ও শলা-পরামর্শের জন্য তাঁর শরণাপন্ন হয়, তাঁর উপদেশ মতো চলে সমাজ ও সংসারের বহু জটিল সমস্যার সমাধান করে, দুঃখ সৈন্যপূর্ণ পরিবেশ ফুলের হাসির মতো আনন্দঘন হয়ে উঠে। এই সকল কারণে পৃথিবীতে কী রাজনীতিতে, কি সমাজ-নীতিতে, কি অর্থনীতিতে শিক্ষিত জ্ঞানী ব্যক্তিদের আধিপত্য দেখা যায়। যে-কোন একটি দেশের কথা ধরলেই এ-কথার সত্যাসত্য নির্ণীত হবে। দেশের অশিক্ষিত ও অজ্ঞ ব্যক্তিরা সময়ে অসময়ে এ সব জ্ঞানী ব্যক্তিদের উপদেশ-নির্দেশ মাথা পেতে নিয়ে জীবন কাটিয়ে দেয় মাত্র। না দিয়ে উপায় নেই, কারণ জ্ঞানের মহিমার কাছে সকলেই পরাজয় মেনে নিতে বাধ্য।

সংসার অসার আবাসে পরিণত হই যদি চর্চা | শারীরিক দিক থেকে দুর্বল দেহের অধিকারী। হস্তী, সিংহ, বাঘ, ভল্লুক এ-সকল অন্তুর মতো সে শক্তিশালীও নয়। বিপদে-আপদে এইসব সহিত আঁটিয়া এটা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তার পায়ে অশ্বের তীব্রগতি নেই। পাখির মতো ডানা নেই, সর্গের মতো মুখে তীব্র হলাহল নেই যে আক্রান্ত হলে দুর্বলদেহী মানব সব সকল বিপদ কাটিয়ে উঠতে পারে। অর্থাৎ বাহুবলে মানুষের চাইতে দুর্বল কেউ নয়। বাহুবলের উপর নির্ভর করতে হলে কবে পৃথিবী থেকে তার অস্তিত্ব মুছে যেত।

কিন্তু তা সম্ভব হতে পারে না। কারণ মানুষ জ্ঞান ও বুদ্ধিবলে ধনী। এ-শক্তি আর কারো নেই। তাই দেখা যায় যে, মানুষ সিংহ, ব্যাঘ্র, হস্তী, ভল্লুকের মতো শক্তিশালী না হয়েও বুদ্ধিবলে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের দ্বারা পৃথিবীকে দাস বুঝিয়েছে। আজ পৃথিবীর উপর প্রভুত্ব করতেছে মানুষ। বুদ্ধির জোরে মানুষ বনের হিংস্র পশুদের মন্ত্রপূত ভুজঙ্গের মতো বশ মানিয়েছে। আকাশের পাখিকে ধরে সে খাঁচায় আবদ্ধ করেছে। বুদ্ধিবলে দৈত্যাকৃতি হস্তীকেও মানুষ পরিচালিত করছে নিজের ইচ্ছা মতো। আজ পৃথিবীকে বশীভূত করেও মানুষ সন্তুষ্টচিত্ত নয়; সে মহাশূন্যে অভিযান করছে। গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে আজ তার দুর্বার অভিযাত্রা। সে স্পুটনিক তৈরি করেছে, মহাশূন্যে রকেট ছারছে। সে দেখতে চায় পৃথিবীর ওপারে রয়েছে যে গ্রহ ও জগৎ তার রূপ কিরূপ, স্বরূপ কিরূপ? এক কথায় মানুষ এই বিশ্ব ভুবনকে নিজের মুঠার মধ্যে এনে নতুন নতুন চিন্তা ভাবনায় লিপ্ত রয়েছে। নানা বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের দ্বারা দুঃখের পৃথিবীকে সুখের নিকেতনে পরিণত করেছে। এ সম্ভব হয়েছে শুধু মানুষের বুদ্ধি ও জ্ঞানের জন্য। কাজেই জ্ঞানের শক্তি অপরিসীম।

বর্তমানে বিশ্বের দুইটি প্রধান শক্তি- পরাশক্তি (Super power) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। এই দুই পরাশক্তির উন্নতির মূলে আছে তাদের বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার অর্থাৎ জ্ঞান ও সুদ্ধির চমকপ্রদ কৌশল। তারা সামরিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি সাধন করেছে বলে তারা বিশ্বের অন্যান্য জাতির কাছে অনুকরণযোগ্য। জ্ঞানের নলেই তারা মহাশূন্য জয় করেছে, পারমাণবিক শক্তির মালিক হয়েছে।

সেকালের কথাই ধরা যাক্। সেকালে মানুষ সভ্যতার উচ্চ শীর্ষে আরোহণ করেছিল। গ্রীস, রোম, প্রাচীন মিসর-এ সকল দেশের সভ্যতা আজও আমাদের বিষয়ের উদ্রেক করে। এর মূলে কি ছিল? ছিল উন্নত জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা। প্রাচীন মিসর প্রথম কাগজের ব্যবহার চালু করেছিল বলে জানা যায়। তিন হাজার বছর পূর্বে মিসরের কারিগর ও বৈজ্ঞানিকেরা মিসরের সম্রাট ফেরাউনের মৃত্যুর পর তাঁদের মৃতদেহগুলিকে ‘মমি’তে পরিণত করে রাখত এবং সেই মমির উপর বিশালকায় ‘পিরামিড’ তৈরি করে মমিগুলির সংরক্ষণ করত। কিভাবে ‘মমি’ তৈরি করা হত? এর পশ্চাতে আছে জ্ঞান ও বুদ্ধি। জ্ঞান বুদ্ধিবলে সেকালের মানুষ ও একালের মানুষ বিশ্বকে শাসন করেছে এবং করে আসছে। ভবিষ্যতের মানুষও আগামীকালের পৃথিবীকে বুদ্ধিবলে শাসন করবে। জ্ঞানই যে প্রধান শক্তি অর্থাৎ ‘Knowledge is Power’ এর প্রমাণিত সত্য। সর্বকালের জন্যও সত্য হয়ে থাকবে।

ট্যাগ- জ্ঞানই শক্তি প্রবন্ধ রচনা, জ্ঞানই শক্তি প্রবন্ধ রচনা PDF সহ, জেনে নিন জ্ঞানই শক্তি প্রবন্ধ রচনা, ডাউনলোড জ্ঞানই শক্তি প্রবন্ধ রচনা,

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button