জীবনীপ্রবন্ধ রচনা

দানবীর হাজী মহম্মদ মহসীন প্রবন্ধ রচনা 700 শব্দের মধ্যে

হাজী মুহাম্মদ মহসিন  (Haji Muhammad Mohsin ) (৩ জানুয়ারি ১৭৩২ – ২৯ নভেম্বর ১৮১২) ছিলেন ঊনবিংশ শতাব্দীর বাংলার একজন প্রখ্যাত মুসলিম জনহিতৈষী, ধার্মিক, উদার ও জ্ঞানী ব্যক্তি, যিনি তাঁর নিজের দানশীলতার মহৎ গুণাবলীর জন্য দানবীর খেতাব পেয়েছিলেন।

দানবীর হাজী মহম্মদ (Haji Muhammad Mohsin ) মহসীন প্রবন্ধ অনুসারে একজন বরেণ্য মুসলিম বাঙালী ; শিক্ষা ও সমাজকল্যাণে কোন মুসলমান বাঙালীর অবদান ; একজন প্রাতঃস্মরণীয় বাঙালী; মহম্মদ মহসীন এর জীবনী; একজন দানবীর ভারতীয় প্রবন্ধ রচনা লেখা যাবে।

দানবীর হাজী মহম্মদ মহসীন

[ প্রসঙ্গসূত্রঃ ভূমিকা ; জন্ম ও পিতৃপরিচয়; বাল্যজীবন ও শিক্ষা ; দেশভ্রমণে জ্ঞানার্জন ; বৈপিত্র ভগিনীর সম্পত্তিলাভ; শিক্ষা ও জনকল্যাণে মুক্তহস্তে দান; চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য ; মৃত্যু ও উপসংহার। ]

“হাজি মহম্মদ মহসীনের পবিত্র নাম স্মরণ করিলে হৃদয় পবিত্র হয়,
তাঁহার করুণার পরিচয় পাইলে মন আনন্দে পরিপূর্ণ হইয়া উঠে।”

(‘ভারত-প্রতিভা’—–—–সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় সম্পাদিত)

শিক্ষা, সমাজকল্যাণ, ধর্মনিষ্ঠা, ত্যাগ-তিতিক্ষাময় জীবনযাপনের জন্য বাংলার যে সব সুসন্তান ভূমিকা বিশ্ববাসীর শ্রদ্ধার্জন করেছেন, হাজি মহম্মদ মহসীন তাঁদের একজন। ১৭৩২ খ্রীস্টাব্দে হুগলী নগরীতে মহসীন জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন পারস্যদেশীয়

বণিক হাজি ফয়জুল্লা। আগা মতাহর নামে একজন পারস্য দেশীয় সম্ভ্রান্ত ধনী বণিক হুগলীতে বাস করতেন। তাঁর বিধবা পত্নীকে ফয়জুল্লা বিবাহ করেন এবং তাঁদেরই সম্ভান মহসীন। আগা মতাহর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর বিপুল আয়বিশিষ্ট

জন্ম ও পিতৃপরিচয়

স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি তাঁর একমাত্র কন্যা মন্নুজানকে দান করে যান। মহসীন পিতামাতার আদরের ধন ছিলেন। শৈশবে ভোগ-বিলাসের মধ্যেই তিনি লালিত হয়েছিলেন। কিন্তু তৎকালীন সম্ভ্রান্ত বংশের অন্য ছেলেদের মতো তাঁর বিলাসিতার দিকে আদৌ মন ছিল না। তিনি বাল্যকাল থেকেই ছিলেন আমোদ-প্রমোদে নিঃস্পৃহ। শৈশব থেকেই ধর্ম, ঈশ্বর এবং জ্ঞানার্জনের প্রতি তাঁর তীব্র আগ্রহ ছিল। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যার্জনের আকাঙ্ক্ষাও বর্ধিত হয়।

বাল্যজীবন ও শিক্ষা

সিরাজী নামে এক ধর্মপ্রাণ মহাপণ্ডিত মুসলমানের উপর ছিল তাঁর শিক্ষার দায়িত্ব। তিনি আরবী ও ফারসী ভাষায় ব্যুৎপন্ন ছিলেন। সিরাজীর সংস্পর্শে মহসীনের চরিত্রে বিদ্যানুরাগ এবং ধর্মানুরাগ যেমন বর্ধিত হল, তেমনি অপরের দুঃখে তার প্রাণ কেঁদে উঠতে লাগলো। সিরাজীর কাছে কৈশোর শিক্ষা শেষ করে তিনি মুর্শিদাবাদের তৎকালীন শ্রেষ্ঠ মুসলমানদের শিক্ষাকেন্দ্র মক্তবে পড়াশুনার জন্য যান। সেখানকার পাঠ শেষ করে আরও উচ্চ শিক্ষালাভের জন্য এবং আরবী ও ফারসী ভাষায় সুগভীর পাণ্ডিত্য অর্জনের জন্য তিনি আরব ও পারস্য দেশে গমন করেন।

দেশভ্রমণে জ্ঞানার্জন

বিদেশে থাকাকালে গভীর অধ্যয়নের ফলে আরবী-ফারসী ভাষা এবং ইসলাম ধর্ম সম্বন্ধে অগাধ পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। মক্কা ও মদিনা তীর্থ দর্শনের পর এশিয়া মহাদেশের আরবী ও ফারসী বিদ্যার পীঠস্থান নাজফ নামক জায়গায় যাওয়ার পথে দস্যুদল তার সর্বস্ব লুণ্ঠন করে। বিদেশে সহায়সম্বলহীন অবস্থায়ও ঈশ্বরের প্রতি তাঁর ভক্তি ও বিশ্বাস অটুট ছিল। এর পর তিনি তুরস্ক ও মিশর দেশ পর্যটন করে নানা বিষয়ে প্রভৃত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে ভারতবর্ষে ফিরে আসেন।

বৈপিত্র ভগিনীর সম্পত্তি লাভ

মহসীন তখনো ভারতভ্রমণে রত। এমন সময় মৃত্যুপথযাত্রিণী ভগিনী মন্নুজানের কাতর আহ্বানে সাড়া দিয়ে হুগলীতে প্রত্যাবর্তন করেন। ১৮০৩ খ্রীস্টাব্দে মন্নুজান ভ্রাতাকে তাঁর বিপুল বৈভবের উত্তরাধিকার দিয়ে লোকান্তরিতা হন।

শিক্ষা ও জনকল্যাণে মুক্তহস্তে দান

বিপুল সম্পত্তির অধিকারী হয়েও মহসীন নিরাসক্ত ফকিরের মতো জীবন-যাপন করতে থাকেন। আর্তপীড়িত, অন্নহীনের সেবার জন্য তাঁর ধনভাণ্ডার থেকে মুক্ত হস্তে দান করতে লাগলেন। তিনি জনকল্যাণ ও শিক্ষাপ্রসারে জীবন উৎসর্গ করেন। তাঁর চেষ্টায় হুগলীতে সর্বসাধারণের শিক্ষার জন্য একটি বিদ্যালয় স্থাপিত হল; পরবর্তীকালে তাঁর দানেই হুগলীতে কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। হুগলী, কলকাতা, যশোহর, চট্টগ্রাম প্রভৃতি স্থানের মাদ্রাসাসমূহের উন্নতির জন্য তিনি প্রচুর অর্থ দান করেন। ১৮০৬ খ্রীস্টাব্দের ৯ই জুন ধর্মবীর, দানবীর মহসীন উইল করে। এক লক্ষ ছাপ্পান্ন হাজার টাকা আয়ের বিপুল সম্পত্তির সবটুকুই দীনদরিদ্রের সেবা ও শিক্ষার জন্য দান করে দিয়ে যান। মহসীন-ফাণ্ডের টাকায় হুগলী, ঢাকা, চট্টগ্রাম, কলকাতা, যশোহর, রাজশাহীর মাদ্রাসা কলেজগুলির ব্যয়ভার বহন করা হয়। হুগলীর ইমামবাড়াও তাঁর দানেই সৃষ্ট ও পরিচালিত।

ঢারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

হাজি মহম্মদের চরিত্রে কোন সাম্প্রদায়িক ভেদবুদ্ধির লেশমাত্র ছিল না। তাঁর বিপুল জমিদারির অধিকাংশ কর্মচারী ছিলেন হিন্দু। তিনি ছিলেন ইসলামধর্মের একনিষ্ঠ সাধক কিন্তু চিত্তবৃত্তিতে ছিলেন ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতামুক্ত। আর এমন স্বাবলম্বী, সরল, ধর্মপ্রাণ মানুষ এদেশে খুব কমই জন্মেছেন।

মহাপ্রয়াণ

ধর্মকার্য ও পরসেবায় সমস্ত সম্পত্তি উৎসর্গ করার পর মাত্র ছ’ বছর মহসীন বেঁচেছিলেন। ১৮১২ খ্রীস্টাব্দে এই ধর্মনিষ্ঠ দানবীরের মহাপ্রয়াণ ঘটে।

উপসংহার

হাজি মহম্মদ মহসীনের দানে মুসলমান সমাজের উপকার হয়েছে বেশি। কারণ সে সময় তাঁরা ছিলেন শিক্ষার আলোকবঞ্চিত ও দারিদ্র্যপীড়িত। তাঁদের শিক্ষা ও উন্নয়নের কাজে মুক্তহস্তে দান করে মহসীন দেশের অপরিমেয় উপকার করেছেন। মহসীনের মতো উদার, সাম্প্রদায়িক ভেদ-বুদ্ধিরহিত ব্যক্তিকে পেয়ে বাঙালী এবং ভারতবাসী হিসাবে আমরা গৌরব বোধ করি। তাঁর জনকল্যাণের আদর্শ আমাদের চিত্তকে উদ্বুদ্ধ করে।

ট্যাগ- মহম্মদ মহসীন, মহম্মদ মহসীন এর জীবনী।

এটিও পড়ুন – প্রণব মুখোপাধ্যায় এর বর্ণময় জীবনী

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button