প্রবন্ধ রচনা

ভারতীয় সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রবন্ধ রচনা

ভারতীয় গণতন্ত্র ও সেকিউলারিজম

ভারতীয় সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতাঃ এই পোষ্টে ভারতীয় সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতা উপর প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হল। বাংলার একটি গ্রামের চিত্র প্রবন্ধ রচনা এর আগের পোষ্টে শেয়ার করা হয়েছিল চাইলে দেখে নিতে পারেন। এই প্রবন্ধ অনুসারে অনুরুপ রচনা লেখা যাবে ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষতার ভূমিকা, ভারতীয় গণতন্ত্র ও সেকিউলারিজম ইত্যাদি। [100+ ইংরেজি প্রবন্ধ রচনা পড়ুন এখানে]

ভারতীয় সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতা

রচনা-সংকেত : ভূমিকা-ভারতীয় সমাজের গঠনবৈশিষ্ট্য—সংবিধান প্রদত্ত নিরপেক্ষতা—ধর্মীয় মৌলবাদের বীভৎসতা ও পরিণাম-সাধারণ জীবনযাত্রা ও মৌলবাদ-জাতীয় সংহতি ও ঐক্য রক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষতার ভূমিকা-উপসংহার।

ভূমিকাঃ

দেশ, জাতি, ভাষা ও ধর্মের প্রতি অনুরাগবশত আমরা ভাবাবেগে হই । দেশের ইতিহাস সভ্যতা, সংস্কৃতি, সমাজ, স্বাধীনতা কিংবা দেশীয় ধর্মকর্মের কথা উঠলে আপ্লূত হই। মহান দেশের ইতিহাস ও  ঐতিহ্যের গর্ব একই প্রবণতাবশত আমাদের অভিভূত করে। এ থেকেই দেশপ্রেম, জাতীয়তাবােধ প্রভৃতি সূক্ষ্ম অনুভূতির উদ্ভব। এ জাতীয় অনুভূতির অদৃশ্য সূত্রের দৃঢ় বন্ধনে গাঁথা হয়ে আমরা ঐক্য-সংহতির শক্ত বনিয়াদের উপর গড়েছি আসমুদ্রহিমাচল বিস্তৃত। বিশাল ভারত ভূখণ্ডে অবস্থিত ভারতীয় সমাজ।

ভারতীয় সমাজের গঠন বৈশিষ্ট্য 

ভারতীয় সমাজ প্রকৃতপক্ষে বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে গঠিত এক বহুজাতিক সমাজ। সেইসঙ্গে বহুভাষিক। বহুধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস হেতু বহুধর্মেরও। সূতরাং বিভেদের মধ্যে, বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যস্থাপনের মহামন্ত্রে ভারত দীক্ষিত। ভারতের সভ্যতা ঐক্যমুখীন সভ্যতা। ভারত ইতিহাসের উপাদানগত গঠনবৈশিষ্ট্য বীজমন্ত্র ‘Unity among diversities’ এখানে জাতি, ধর্ম ও ভাষাগত স্ব-স্ব বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্য থাকলেও, দেশের সার্বিক স্বার্থে অভিন্ন ঐক্যবােধে আমরা দৃঢ়বদ্ধ—যেন একদেহে একাকার। ভারতীয় সমাজের এটিই যুগযুগ বাহিত গঠনগত বৈশিষ্ট্য। এই সমাজ হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান নানা ধর্মীয় ও সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের সহাবস্থান।

সংবিধান প্রদত্ত ধর্মনিরপেক্ষতা

ভারতীয় সমাজের গঠনগত বৈশিষ্ট্যের দিকে তাকিয়ে সংবিধানে ভারতকে সার্বভৌম সেকিউলার বা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র হিসাবে ঘােষণা করা হয়েছে। সমতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের বনিয়াদের উপর রচিত নতুন রাষ্ট্র গঠনের শপথ নিয়ে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জানুয়ারি থেকে সার্বভৌম ভারত রাষ্ট্রের যাত্রা শুরু হয়েছে। সংবিধান নাগরিককে দিয়েছে ধর্মীয় স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রনীতিকে ধর্মীয় শাসন থেকে মুক্ত রাখার প্রয়ােজনীয় সংস্থান আছে সংবিধানে। এ কথা তাে ঠিকই, প্রতিটি মানুষের নিজের পছন্দ ও বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্মানুসরণের স্বাধীনতা ও অধিকার থাকা বানীয়। তা বলে ধর্মীয় স্বাধীনতার অর্থ জনগণের নৈতিকতাকে সংকুচিত করা নয়, বা অন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শনও নয়। ধর্মনিরপেক্ষতার শপথ যেখানে, সেখানে রাষ্ট্রের কোনাে নিজস্ব ধর্মবিশ্বাস থাকতে পারে না। রাষ্ট্র ও রাজনীতির সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক শূন্যতাই ধর্মনিরপেক্ষতার অন্যতম কাঙ্ক্ষিত শর্ত।

ধর্মীয় মৌলবাদের বীভৎসতা ও পরিণাম

অথচ ধর্মনিরপেক্ষ ভারতীয় সমাজে মৌলবাদের প্রবণতা রাষ্ট্রে লােকায়ত আদর্শ প্রতিষ্ঠার পক্ষে হয়েছে। বড়াে অন্তরায়। ধর্মনিরপেক্ষতার সংবিধানস্বীকৃত শপথ নিয়ে প্রায় চার দশক ধরে রাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও সাম্প্রদায়িক দল ও সাম্প্রদায়িকতাবাদ ভারত থেকে অবলুপ্ত হয়নি। বরং সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি ব্রমবর্ধমান। হিন্দু হােক, মুসলিম হােক, শিখ হােক, মৌলবাদীরা নিষ্ক্রিয় ও নিশ্চেষ্ট হয়ে বসে নেই। উগ্র ধর্মবােধের ধ্বজা ধরে হিন্দুরা ভাবে হিন্দুরাষ্ট্র কায়েম করতে, শিখরা চায় পাঞ্জাবে খালিস্তান, কাশ্মীরকে স্বতন্ত্র পাকিস্তানে পরিণত করে মুসলিম মৌলবাদীরা চায় পৃথক রাষ্ট্র। তা ছাড়া আছে একশ্রেণির কায়েমি স্বার্থবাদীর দল, যারা সংকীর্ণ শ্রেণিস্বার্থে ধর্মীয় অন্ধত্ব ও সাম্প্রদায়িকতাকে উসকে দিয়ে স্বার্থসিদ্ধির জঘন্য প্রয়াসে তলে তলে হয়ে ওঠে উন্মত্ত। আর তার শিকার হয়। নিরীহ অসহায় নাগরিক। ধর্মীয় অন্ধত্ব ও নগ্ন সাম্প্রদায়িকতার একটি জঘন্য দৃষ্টান্ত হল ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর একদল কট্টর হিন্দু মৌলবাদী করসেবার নামে প্রায় পাঁচশাে বছরের পুরােনাে বিতর্কিত একটি ধর্মস্থানকে ভেঙে ধুলােয় মিশিয়ে দেয়। ওই হঠকারিতা, ওই উন্মাদন, ওই পৈশাচিক অপকর্মের প্রতিক্রিয়া ও পরিণাম যে কী ভয়াবহ আকার নিতে পারে, মৌলবাদীরা তা ভেবে দেখেননি। অথবা ভয়ংকর পরিণামের ভিতরেই ফায়দা লােটার পূর্ব পরিকল্পনা নিয়ে ওই দুষ্কর্মে হাতে দিয়ে থাকতে পারেন। যাই হােক, সেই কলঙ্কিত ধ্বংসকর্মের পরিণামে সারা দেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের আগুন দাবাগ্নির মতাে লেলিহান জিহ্বা বিস্তার করে ছড়িয়ে পড়ে। একই রকম মৌলবাদের অপরিণামদর্শিতায় গুজরাতে ভয়াবহ দায় বহু নিরপরাধ প্রাণ ঝরে যায়।

সাধারণ জীবনযাত্রা ও মৌলবাদ

যে-কোনাে দেশে মৌলবাদীর সংখ্যা মুষ্টিমেয়। সাধারণ মানুষই সংখ্যাগরিষ্ঠ। তারা খেতে-খামারে, কলে – কারখানায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাতে হাত রেখে কাজ করে। তারা যুগ যুগ ধরে পরস্পরের সুখ-দুঃখের শরিক হয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে পাশাপাশি বাস করে। ধর্মেকর্মে একে অপরের বুকে আলিঙ্গনাবদ্ধ হয়। যে-কোনাে উৎসবানুষ্ঠানে প্রীতি-শুভেচ্ছার বিনিময় করে আনন্দে মেতে ওঠে। এদের দৈনন্দিন অনটনের জীবনে মন্দির-মসজিদ বিতর্কের মূল্য কতটুকু ? ওই অর্থহীন বিতর্কের ঘূর্ণাবর্তে ওই শান্তিপ্রিয় মানুষগুলির জীবনকে টেনে এনে যারা অশান্তির লােনাজল ভরে দেয়, তাদের মুখে কি গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, মানবতাবাদের চোখা চোখা বুলি শােভা পায় ?

জাতীয় সংহতি ও ঐক্য রক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষতার ভূমিকা

জাতীয় সংস্কৃতি ও ঐক্য রক্ষায় ধর্মনিরপেক্ষতা অপরিহার্য। একমাত্র ধর্মনিরপেক্ষতা সাম্প্রদায়িকতাকে পরাভূত করে ভিন্ন ধর্মীয় মানুষের মধ্যে ঐক্যের ভিত্তি দৃঢ় করতে পারে। ধর্মীয় অনুশাসন আসে অন্তর থেকে, আরােপিত নির্দেশের দ্বারা বাধ্যবাধকতা ধর্মের প্রতিকূল। শরিয়ত যেমন অমুসলমানদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অন্যায়, হিন্দুর ধর্মানুশাসন অহিন্দুর উপর চাপিয়ে দেওয়াও তেমন ন্যায়সংগত নয়। সেজন্য সকল মানুষের মধ্যে এই বােধ জাগাতে হবে যে, হিন্দু, মুসলমান, শিখ, পারসি, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ যে-কোনাে ধর্মের লােক হােক, ভারত তাদের দেশ, তারা ভারতীয় ও ভারতের প্রতি আছে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত আনুগত্য। জাতীয় সংহতির প্রয়ােজনে ধর্মের বিরুদ্ধে নয়, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার নামে বিকৃত প্রচারের বিরুদ্ধে লাগাতার সংগ্রাম অভিপ্রেত।

উপংহার

প্রকৃত ধর্মের অন্তর্নিহিত সত্যই হল মানবমনকে প্রবুদ্ধ করে ন্যায়নীতি ও কর্তব্য পালনে অনুপ্রাণিত করা, উপসংহার সত্য ও সুন্দরের সাধনায় ব্রতী করা। তাই বলে, সমাজজীবনে ধর্ম শুধু ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, পারস্পরিক। সহনশীলতার মাধ্যমে সবশ্রেণির ধর্মীয় মানুষের বিশ্বাস ও ধর্মানুশীলনকে মর্যাদা দিয়ে ধর্মের স্বাধীনতাকে প্রতিষ্ঠিত করে সমাজে শান্তিশৃঙ্খলা ও সৌভ্রাতৃত্ব বজায় রাখাই ধর্মনিরপেক্ষতার সার্থকতা।

ট্যাগঃ ভারতীয় সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রবন্ধ রচনা 700 শব্দের মধ্যে, ভারতীয় সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রবন্ধ, ভারতীয় সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতা রচনা, Download PDF ভারতীয় সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতা প্রবন্ধ রচনা

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button