উদ্ভিদের পুষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত
স্বভােজী পুষ্টি, সংশ্লেষ, আত্তীকরণ, পরভােজী পুষ্টি, পরজীবী ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা

উদ্ভিদের পুষ্টিঃ পুষ্টি হলো পরিবেশ থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যবস্তু আহরণ করে খাদ্যবস্তুকে পরিপাক ও শোষণ করা এবং আত্তীকরন দ্বারা দেহের শক্তির চাহিদা পূরণ , রোগ প্রতিরোধ , বৃদ্ধি ও ক্ষয়পূরণ করা ৷ অর্থ্যাৎ দেহ সুস্থ ও সবল রাখার প্রক্রিয়াকে বলে পুষ্টি৷ এই পোষ্টে উদ্ভিদের পুষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
উদ্ভিদের পুষ্টি সম্পর্কে বিস্তারিত
উদ্ভিদের পুষ্টি: পুষ্টির ব্যাপারে বেশীর ভাগ উদ্ভিদ স্বনির্ভর, অর্থাৎ এই সকল উদ্ভিদ নিজেদের দেহে খাদ্য সংশ্লেষ করে পুষ্টি সাধন করে। নিজেদের দেহে খাদ্য সংশ্লেষ করে পুষ্টিসম্পন্ন। করাকে স্বভােজী পুষ্টি বলে এবং স্বভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী জীবদের স্বভােজী বলা হয়। আম, জাম, কাঠাল, বট, অশ্বথ, ধান, গম, ভুট্টা, ফণিমনসা, পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ রায় । অর্কিড, শৈবাল, মস, ফার্ণ ইত্যাদি সকল প্রকার সবুজ উদ্ভিদে এবং কয়েকটি এককোষী সবুজ প্রাণীতে (ইউগ্লিনা, ক্রাইসামিবা ইত্যাদি) এই ধরনের পুষ্টি সম্পন্ন হয়। এমন অনেক উদ্ভিদ আছে, যেমন—মৃতজীবী ও পরজীবী ছত্রাক, পরজীবী স্বর্ণলতা ইত্যাদি খাদ্য সংশ্লেষে অক্ষম হওয়ায় এরা স্বভােজী উদ্ভিদের তৈরি খাদ্য খেয়ে পুষ্টি সাধন করে। এদের পুষ্টিকে পরভােজী পুষ্টি বলে এবং পরভােজী পুষ্টি সম্পন্নকারী জীবদের পরভােজী বলে। সুতরাং উদ্ভিদের পুষ্টি প্রধানত দু’রকমের, যেমন—স্বভােজী পুষ্টি ও পরভােজী পুষ্টি।
স্বভােজী পুষ্টি: যে পুষ্টি প্রক্রিয়ায় জীবেরা নিজেদের দেহে খাদ্য সংশ্রেষ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে, তকে স্বভােজী পুষ্টি বা অটোট্রফিক পুষ্টি বলে। উদাহরণঃ সমস্ত সবুজ উদ্ভিদ, যেমন—আম, জাম, কাঠাল, বট, অশ্বথ, লাউ, কুমড়াে, ফার্ণ, মস, শৈবাল, পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ রান্না ইত্যাদি। পদ্ধতি ও স্বভােজী পুষ্টি দুটি পর্যায়ে সম্পন্ন হয়, যথা–(i) সংশ্লেস এবং (ii) আত্তীকরণ।
সংশ্লেষ: এই পর্যায়ে সবুজ উদ্ভিদরা পরিবেশ থেকে বিভিন্ন উপায়ে জল ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড শােষণ করে, সবুজ ক্লোরােফিলযুক্ত কোষে সূর্যালােকের উপস্থিতিতে প্রাথমিকভাবে গ্লুকোজ সংশ্লেষ করে। পরে গ্লুকোজকে শ্বেতসার বা প্রােটিন বা স্নেহপদার্থে রূপান্তরিত করে দেহের বিভিন্ন অংশে, যেমন—মূল, কাণ্ড, পাতা, ফল ও বীজে সঞ্চয় করে। এরপরে এইসব জটিল খাদ্যকে পুনরায় সরল খাদ্যে রূপান্তরিত করে দেহকোষে আত্তীকরণের মাধ্যমে পুষ্টি সম্পন্ন করে। সরল অজৈব খাদ্যোপাদান থেকে দেহকোষের উপযােগী জৈব যৌগ পদার্থ গঠন করাকে সংশ্লেষ বলে।
আত্তীকরণ : এই পর্যায়ে উদ্ভিদ সংশ্লেষিত সরল খাদ্যকে প্রােটোপ্লাজমের অংশীভূত করে নানান বিপাকীয় কার্যের উপযুক্ত করে তােলে এবং বিপাকের মাধ্যমে দেহের বৃদ্ধি ঘটায় ও গুদ্ক ওজন বাড়ায়। এইভাবে সরল খাদ্যোপাদানকে প্রােটোপ্লাজমের অংশীভূত করার পদ্ধতিকে আত্তীকরণ বলে।
স্বভােজী পুষ্টিতে উদ্ভিদ তরল ও গ্যাসীয় অবস্থায়, সরুল ও অজৈব খাদ্য উপাদান সংগ্রহ করে জৈব খাদ্য প্রস্তুত করে বলে এই প্রকার পুষ্টিকে হলােফাইটিক পুষ্টি বলা হয়।
এটিও পড়ুন – টবে চাষ পদ্ধতি পদ্ম, বেলি, শিউলি, তরুলতা ইত্যাদি
পরভােজী পুষ্টিঃ অসবুজ উদ্ভিদরা নিজেদের দেহে খাদ্য সংশ্লেষে অক্ষম, এই কারণে ঐ সকল উদ্ভিদ খাদ্যের জন্য স্বভােজী উদ্ভিদের উপর বা মৃত পচনশীল জৈব পদার্থের উপর নির্ভরশীল। এইসব উদ্ভিদ সাধারণত সজীব আশ্রয়দাতার দেহ থেকে অথবা মৃত জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে।
যে পুষ্টি প্রক্রিয়া জীবেরা নিজেদের দেহে আদা সংশ্লেষ না করে অপর কোন শয়দতার দেহ থেকে অথবা ১৩ জুন পদার্থ থেকে পুষ্ঠিরস শােষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন রে, তাকে পরভােজী পুষ্টি বলে।
উদাহরণ- বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক, স্বলিত, রাফ্রেসিয়া, বেনে-বৌ এবং পতঙ্গভুক ের পরভােজী পুষ্টি দেখা যায়। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, প্রাণীদের পুষ্টি পরভােজী পুষ্টি।
পরভােজী উদ্ভিদঃ যেসব উদ্ভিদের পরভােজী পুষ্টি দেখা যায়, তাদের খাদ্যের উৎস অনুযায়ী নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা হয়, যেমন(১) মৃতজীবী, (২) পরজীবী, (৩) মিথােজীবী বা অন্যোন্যজীবী এবং (৪) পতঙ্গভুক।
মৃতজীবীঃ যে সকল উদ্ভিদ পচা ও গলিত উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ অথবা অন্যান্য জৈব পদার্থ, যেমন—গােবর, ভিজে কাঠ, ভিজে চামড়া, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি পচনশীল জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে, তাদের মৃতজীবী বা স্যাপ্রােফাইট বলে। ব্যাঙের ছাতা বা অ্যাগারিকাস, ঈস্ট, পেনিসিলিয়াম, মিউকর ইত্যাদি ছত্রাক এবং মনােট্রোপা নামের সপুষ্পক উদ্ভিদ পূর্ণ মৃতজীবী উদ্ভিদ। পাইন গাছ সবুজ, তাই এদের স্বভােজী পুষ্টি পদ্ধতি দেখা যায়; কিন্তু এদের মূলে বসবাসকারী একপ্রকার ছত্রাকের সাহায্যে এরা পরােক্ষভাবে গলিত জৈব পদার্থ শােষণ করে, তাই পাইন গাছ আংশিক মৃতজীবী। , মৃতজীবী উদ্ভিদের পুষ্টিকে মৃতজীবী পুষ্টি বলে।
যে পুষ্টি পদ্ধতিতে পচা-গলিত উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে পুষ্টি সম্পাদিত হয়, তাকে মৃতজীবীয় পুষ্টি বলে।
পরজীবীঃ যেসব উদ্ভিদ অপর কোন সজীব আশ্রয়দাতা উদ্ভিদদেহ বা জীবদেহ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে পুষ্টি সাধন করে তাদের পরজীবী বা প্যারাসাইট বলে। যে উদ্ভিদদেহ থেকে পরজীবী উদ্ভিদ পুষ্টিরস শােষণ করে, তাদের পােষক বা আশ্রয়দাতা বলে। পুষ্টির জন্য যেসব পরজীবী সম্পূর্ণভাবে আশ্রয়দাতার উপর নির্ভরশীল, তাদের পূর্ণ পরজীবী এবং যেসব পরজীবী আংশিকভাবে আশ্রয়দাতর উপর নির্ভরশীল, তাদের আংশিক পরজীবী বলেস্বর্ণলতা, র্যাফ্রেসিয়া পূর্ণ পরজীবী উদ্ভিদ। আলুর পচনশীল রােগ সৃষ্টিকারী ফাইটোপথােরা এবং গমের মরিচা রােগ সৃষ্টিকারী পাকসিনিয়া ছত্রাকও সম্পূর্ণ পরজীবী উদ্ভিদ। চন্দন লােরানথাস, ভিসকাস প্রভৃতি আংশিক পরজীবী উদ্ভিদ। পরজীবী উদ্ভিদের পুষ্টি প্রক্রিয়াকে পরজীবী পুষ্টি বলে।
যে পুষ্টি প্রক্রিয়াকে কোন সজীব পােষকের দেহ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করার ফলে পােষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরজীবী উপকৃত হয়, তাকে পরজীবীয় পুষ্টি বলে।
মিথােজীবী বা অন্যোন্যজীবীঃ যে পুষ্টির জন্য এক জীব অপর কোন জীবের সাহচর্যে জীবনধারণ করে পরস্পর উপকৃত হয় তাকে মিথােজীবী বা অন্যোন্যজীবী বা সিমবায়ােটিক বলে। মিথােজীবী পুষ্টি দু’প্রকারের; যথাব্যতিহারী এবং সহভােক্তা।
ব্যতিহারীঃ এই প্রকার পুষ্টিতে দুটি জীব সহাবস্থান করে পরস্পরের সাহায্যে পুষ্টি সম্পন্ন করে। যেমন—লাইকেন।
সহভােক্তাঃ এই প্রকার পুষ্টিতে দুটি জীব সহবস্থান থেকেও পরস্পর পৃথকভাবে পুষ্টি সম্পন্ন করে। যেমন—পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ রান্না, গজপিপুল ইত্যাদি। যে পুষ্টি প্রক্রিয়ায় দুটি ভিন্ন প্রকারের জীব পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে এবং পুষ্টি সম্পন্ন করে, তাকে মিথােজীবীয় পুষ্টি বলে।
পতঙ্গভুকঃ যেসব উদ্ভিদ নাইট্রোজেনঘটিত প্রােটিন খাদ্যের জন্য পতঙ্গ ধরে পতঙ্গের দেহ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে, তাদের পতঙ্গভুক উদ্ভিদ বলে। কলসপত্রী, সূর্যশিশির, পাতাঝাঝি ইত্যাদি পতঙ্গভুক উদ্ভিদ!
এটিও পড়ুন – সবজি সংরক্ষণ করার পদ্ধতি