স্বাস্থ্য

পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিস্তারিত

কেন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুসরণ করবেন

পরিবার পরিকল্পনা শব্দটি হল সঠিক সময় সন্তান নেবার পরিকল্পনা এবং জন্ম নিয়ন্ত্রণ  ও অন্যান্য পদ্ধতির যথাযত অবলম্বন ও প্রয়োগ নিশ্চিতকরন। অন্যান্য পদ্ধতির মধ্যে যেমন- যৌন শিক্ষা, যৌন সংক্রামকসমুহের নির্গমন প্রতিরোধ ও ব্যবস্থাপনা। পরিবার পরিকল্পনাকে অনেক সময় জন্ম নিয়ন্ত্রণের সমার্থক হিসেবে চিহ্ণিত করা হয় যদিও পরিবার পরিকল্পনার পরিধি আরও বিশদ। এটা সাধারণত স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে করা হয় যারা তাদের সন্তান সংখ্যা নিয়ন্ত্রিত রাখতে চায় এবং তাদের প্রত্যাশিত সময় গর্ভধারন করতে চায়। [ কেন পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি অনুসরণ করবেন ]

পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কিত বিস্তারিত আলোচনা

আজ সমাজের সর্বত্র পরিচিত পরিবার পরিকল্পনা শব্দ দুটি। শিক্ষিত লােক মাত্রহ কথাটির সাথে যুক্ত। পরিবার পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হল জন্ম নিয়ন্ত্রণ। জন্ম নিয়ন্ত্রণ বলতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমাবার যত রকম পদ্ধতি আছে তার সবগুলিকেই বােঝায়। এর মধ্যে শিশুহত্যা, ভ্রাণ হত্যা, বিলম্বে বিবাহ, ব্রহ্মচর্য পালন, যান্ত্রিক কিংবা রাসায়নিক উপায়ে জন্মরােধ করা সবই জন্ম নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পড়ে। আধুনিক ভাষায় জন্ম নিয়ন্ত্রণ বলতে শুধু জন্ম নিরােধকে বােঝায় না। এর যেমন একটি নেতিবাচক দিক আছে, তেমনি আবার একটি ইতিবাচক দিকও আছে। জন্ম নিয়ন্ত্রণের এই ইতিবাচক দিকগুলির উপর জোর দেওয়ার জন্য ১৯৪২ সালে আমেরিকার জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান National Birth Control League Planned Parenthood Federation of America নামকরণ করে। সুপরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান স্বামী-স্ত্রীর আর্থিক সঙ্গতি অনুযায়ী অল্প সংখ্যক সুস্থ ও সবল সন্তান উৎপাদন করা হল জন্ম নিয়ন্ত্রণ তথা পরিবার পরিকল্পনার প্রকৃত অর্থ। জন্ম নিয়ন্ত্রণের ফলে শিশুর আগমন সম্পূর্ণভাবে পিতা-মাতার ইচ্ছাধীন। পরিবার পরিকল্পনা একদিকে যেমন অবাঞ্ছিত শিশুর জন্ম প্রতিরোধ করে অন্যদিকে তেমনি বাঞ্ছিত শিশুর আগমনকে উৎসাহিত করে।

পরিবার পরিকল্পনা

এটিও পড়ুন – নিয়মিত যােগাসন করলে এই নিমগুলি মেনে চলুন

পরিবার পরিকল্পনা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষাঃ জনগণের স্বাস্থ্যরক্ষার সঙ্গে পরিবার পরিকল্পনার প্রশ্নটি ওতােপ্রােতভাবে জড়িত। আমাদের দেশে কিছুদিন আগে পর্যন্ত প্রসূতির মৃত্যুর হার ছিল খুব বেশী। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব ছিল প্রসৃতির মৃত্যুর প্রধান কারণ। নারীর পক্ষে সন্তানধারণ মানেই নিজের জীবনের উপর একটা ঝুঁকি নেওয়া। তার উপর অনেক সময় ঘন ঘন সন্তানধারণের ফলে মেয়েদের স্বাস্থ্য একেবারে ভেঙে পড়ে। প্রসূতি জরায়ু সংক্রান্ত নানা জটিল রােগে আক্রান্ত হয় এবং তার দৈহিক সৌন্দর্য সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়।

প্রসূতি মৃত্যুর মতােই আমাদের দেশে শিশু মৃত্যুর হারও খুব বেশী ছিল। এর কারণ অনুসন্ধানের ফলে দেখা গেছে যে দুই সন্তানের জন্ম সময়ের মধ্যে ব্যবধান ও শিশু মৃত্যুর হারের মধ্যে বেশ একটা ঘনিষ্ঠ সম্বন্ধ আছে। জন্ম সময়ের ব্যবধান যত কম হবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা তত বেশী হবে। দুই সন্তানের জন্মের মধ্যে অন্তত তিন বছরের ব্যবধান থাকা প্রয়ােজন। শিশু এবং প্রসূতি মৃত্যুর হার হ্রাস করা জন্ম নিয়ন্ত্রণের প্রধান উদ্দেশ্য।

আবার যক্ষ্মা, সিফিলিস ও গনােরিয়া ইত্যাদি রােগ বাবা-মা থেকে সন্তানের মধ্যে সংক্রামিত হয়। বাবা-মার মধ্যে এই জাতীয় রােগ বেশী থাকলে তাদের সন্তান না হওয়াই বাঞ্ছনীয় কারণ এই সকল রুগ্ন সন্তান পরিবারের অশান্তির কারণ হয়। এরা সমগ্র সমাজের নিরাপত্তা নষ্ট করে এবং জাতির স্বাস্থ্য দুর্বল করে ফেলে। সুতরাং রুগ্ন শিশুর জন্মদান বন্ধ করে পরােক্ষে জাতির স্বাস্থ্যের মান স্থির রাখা পরিবার পরিকল্পনা বা জন্ম নিয়ন্ত্রণের আরেকটি উদ্দেশ্য।

পরিবার পরিকল্পনার একটি আর্থ-সামাজিক দিকও আছে। প্রত্যেক পরিবারের আয় ও রােজগারের একটা নির্দিষ্ট সীমা আছে। ঐ সীমিত আয়ের মধ্যে প্রত্যেকটি সন্তানকে উপযুক্ত শিক্ষাদীক্ষায় গড়ে তুলে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত করতে হলে সন্তানের সংখ্যা বেঁধে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। কয়েকটি পরিবার নিয়েই আবার একটি জাতি গড়ে ওঠে। কয়েকটি জাতি মিলে গঠিত হয় একটি রাষ্ট্র। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় যদি জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায় তবে দেশের অগ্রগতি ব্যাহত হয়। বিপুল জনসংখ্যাই ভারতের মতাে শস্যশালিনী দেশের পক্ষেও বিরাট বােঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিবার পরিকল্পনার সামাজিক দিকটিও উপেক্ষণীয় নয়। সন্তান সংখ্যা বেশী হলে মা-বাবার পক্ষে প্রত্যেকটি শিশুর সমান যত্ন নেওয়া সম্ভব হয় না। অনাদৃত, অবহেলিত, দরিদ্র জর্জর শিশুরা গৃহের এই অস্বাস্থ্যকর মানসিক পরিবেশ থেকে মুক্তি পাবার জন্য স্বভাবতই বাইরের দিকে ঝুঁকে পড়ে। তারপর নানা কুসঙ্গে পড়ে বিভিন্ন অপরাধ করে এবং এইভাবে পরিবার পরিকল্পনা দ্বারা সমাজের তথা সমগ্র সমাজের হয়ে দাঁড়ায়। কিশাের অপরাধীর সমস্যা বহুলাংশে দূর করা যায়। সমাজ আরও অনেক বেশী সুন্দর হয়ে ওঠে। সোর্স- ইন্টারনেট

এগুলিও পড়ুন  –

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button