Others

আমার প্রিয় ঋতু প্রবন্ধ রচনা

My Favorite Season Essay

বাংলাদেশে প্রধানত চারটি ঋতু আছে। প্রথমটি হল শীতকাল, যা ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত চলে। দ্বিতীয় ঋতু হল বসন্ত, যা মার্চ থেকে মে মাসের শেষ পর্যন্ত চলে। এরপর আসে বর্ষা, যা জুন থেকে আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত চলে। চতুর্থ ঋতু হল শরৎ, যা সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত চলে।

আমার প্রিয় ঋতু (My Favorite Season) হল বসন্ত। এই ঋতুটি সবচেয়ে সুন্দর এবং আনন্দদায়ক। এটি সম্পূর্ণ নতুন জীবনের শুরুটি হিসাবে পরিচিত। প্রকৃতি এই ঋতুতে সম্পূর্ণ নতুন আকর্ষণ প্রদর্শন করে। ফুলগুলো উঠে আসে, সব প্রানী নতুন শক্তি লাভ করে এবং প্রকৃতি পুনর্জাগরণ করে। বসন্ত ঋতুটি আমার জীবনে নতুন আশার এবং উন্নয়নের একটি ছোঁয়া প্রদান করে।

আমার প্রিয় ঋতু

ভূমিকা : বিচিত্র আমাদের দেশ—বাংলাদেশ। ছয় ছয়টি ঋতু সারা বছরে তাদের স্বকীয় বৈশিষ্ট্য নিয়ে বাংলাদেশের বুকে আবির্ভূত হয়। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত এই ছ’টি ঋতু প্রতি বছর দেশের মানুষের কাছে প্রকৃতির মহিমা বিস্তার করে। কিন্তু আমার প্রিয় ঋতু সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হ’লে আমি নিঃসন্দেহে বলবো যে, শরৎ (ভাদ্র ও আশ্বিন মাস) আমার কাছে অন্য ঋতুগুলি অপেক্ষা সেরা। শরৎ আসে বর্ষাকালের অবসানে; তখন সে বাংলার বুকে তার রজতশুভ্র জ্যোৎস্না ও পুষ্প সুষমা নিয়ে আবির্ভূত হয়। বর্ষার বারিধারায় পীড়িত ধরণী আবার হাস্যমুখর হয়ে উঠে। এ জন্য শরৎ আমার প্রিয় ঋতু ।

শরৎ ঋতুর পক্ষে যুক্তি : বর্ষাকালে বাংলার পল্লী অঞ্চলের মানুষের মনে । উৎসাহ সঞ্চারিত হলেও অতিরিক্ত বর্ষণে বন্যার প্লাবন সমগ্র দেশের জন্য অমঙ্গল বয়ে আনে। কিন্তু শরতের মন ভোলানো রূপ সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে আবার গরীয়সী ক’রে তোলে। এ সময়ে বর্ষার ঘনকৃষ্ণ মেঘরাশির আনাগোনা দেখা যায়। না, সেখানে সাদা সাদা মেঘ ইতস্তত আসমানে ভেসে বেড়ায়। শরৎ প্রভাতের মাধুর্য মনকে যেমন দোলা দিয়ে যায় তেমন অন্য কোন ঋতু দেয় না, দিতে পারে না। তাইত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গেয়েছেন

আজি কি তোমার মধুর মূরতি হেরিনু শারদ প্রভাতে।
হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ
ঝলিছে অমল শোভাতে।
পারে না বহিতে নদী জলধার
মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর
ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোযেল
তোমার কানন সভাতে!
মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী
শরৎকালের প্রভাতে।

শরৎকালের সৌন্দর্য : শরতের অনুপম সৌন্দর্যে কবির কি হৃদয়গ্রাহী উপলব্ধি। শরৎকালে মাতৃভূমি বাংলাদেশের যে রূপ-ঐশ্বর্য ফুটে ওঠে তা অন্য ঋতুতে বিরল।

আমিও শরতের মদির সৌন্দর্যে অভিভূত হয়ে পড়ি। রাত্রিকালে শারদ-শশীর উজ্জ্বল কিরণে পথ-ঘাট প্লাবিত হ’য়ে অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত হয়ে ওঠে, শশীর উজ্জ্বল কিরণ-সম্পাতে বাংলার কাশবন, বৃক্ষশীর্ষ, গৃহচূড়া ও নদীর নির্জন বুক সমস্তই হাসাময়ী রূপ ধারণ করে। শরতে ফুল ফোটে, সে ফুল নানা জাতের। ফোটে শেফালি, মালতী, জুঁই, টগর, কামিনী ফোটে শারদীয় ফুল। ফুলের সমারোহে আনন্দে বুক ভরে ওঠে। তাদের সৌন্দর্যে আমার মন হারিয়ে যেতে চায়। তাদের মিষ্টি সুবাস ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে।

শারদীয় মৃদুমন্দ হাওয়া, ফোটা ফুলের স্নিগ্ধ সৌরভ নীলিমার দিগন্ত বিস্তৃত পরিবেশ মানব মনকে উদাস করে তোলে। রাতের শিউলি ঝরে পড়ে প্রভাতের পদধ্বনিতে, ক্ষেতের ফসল আমন্ত্রণ জানায়, জানান দিয়ে যায় শরতের বার্তা। শরতের আগমনে বাংলার বন-উপবন, দোয়েল কোয়েল ময়নার কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। বাংগালী হিন্দু নরনারী শরৎ প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিমুগ্ধ হয়ে ওঠেন, তাঁরা মেতে ওঠেন নানা উৎসব ও পালাপার্বণে।

এদেশের বেশির ভাগ মানুষ কৃষিজীবী। তারা খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষ। শরৎকাল প্রধানত তাদেরই জন্য আনন্দ বয়ে নিয়ে আসে। তারা পরিশ্রম করে, ফসল ফলায়, মাঠে মাঠে তাদের ফসল ফলেছে। সে ফসল ঘরে আসবে তারই আগমনী বার্তা কৃষককুলকে আনন্দ-চঞ্চল করে। ঝির ঝির বাতাস যেমন ঢেউ খেলে যায় মাঠের ফসলে তেমনি দোলা দেয় চাষীর মনে।

শরৎকালের জ্যোৎস্নাচ্ছন্ন রাত্রিতে গ্রামে-গঞ্জের নর-নারী গানের মধ্যে ডুবে থাকে। তারা যাত্রা, কবিগান এসব নিয়ে একপাড়া থেকে অন্য পাড়ায় আসর শরৎ-পূর্ণিমায় শরৎ প্রকৃতির যথার্থ রূপ অবলোকন করা যায়। শরতের আসমান নীল। এই নীলাকাশের কূলে কূলে ছড়িয়ে পড়ে রূপালী জ্যোৎস্না ধারা। আর আকাশ পরিব্যাপ্ত করে অসংখ্য তারার মালা মানুষকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।

উপসংহার : আজ দিন পাল্টিয়েছে অর্থনৈতিক বিপর্যয় সাম্প্রতিককালে মানুষের আনন্দ ও উপলব্ধিকে কাবু করেছে। বাংলার শারদ স্নিগ্ধ মহিমা তার মনে আগের মতো ঝঙ্কার তোলে না। তা না তুললেও প্রেমিক কবি কণ্ঠে ধ্বনিত হয়ে ওঠে :

আজ শরতের আলোয় এই যে চেয়ে দেখি
মনে হয় এ যেন আমার প্রথম দেখা।
আমি দেখলাম নবীনকে,
প্রতিদিনের ক্লান্ত চোখ
যার দর্শন হারিয়েছে।

এটিও পড়ুন- আমাদের শিশুসাহিত্য প্রবন্ধ রচনা

Tag: আমার প্রিয় ঋতু, Download আমার প্রিয় ঋতু PDF

এগুলিও পড়তে পারেন -

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button