অনুচ্ছেদ রচনা লেখার সঠিক নিয়ম
অনুচ্ছেদ রচনা কী? অনুচ্ছেদ রচনা এবং প্রবন্ধ রচনার মধ্যে পার্থক্য কী?

অনুচ্ছেদ রচনাঃ নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে নিজের মনােভাবকে, তথ্যসমৃদ্ধ আকারে, স্বল্প ভাষায় প্রকাশ করার জন্য অনুচ্ছেদ রচনার প্রয়ােজন হয়। এককথায় – কোনও বিষয়কে যদি ছোট আকারে সামান্য কিছু কথার লিখতে হয় তখন তাকে অনুচ্ছেদ বলে (Paragraph)।
একটি বিষয়কে সঠিকভাবে উপস্থাপন করার প্রয়ােজনীয় লিখনশৈলীর কৌশলকে রপ্ত করতে হবে। তাকেই অনুচ্ছেদের মাধ্যমে লিখনদক্ষতার বিকাশ ঘটবে।
এটিও পড়ুন – খেলাধুলার প্রয়োজনীয়তা প্রবন্ধ রচনা
অনুচ্ছেদ রচনা এবং প্রবন্ধ রচনার মধ্যে পার্থক্য কী?
১) অনুচ্ছেদ হল প্রবন্ধের কোন বিষয় বা কোন নির্দিষ্ট কিছু বর্ননা করার বিষয়গত ও গঠনগত অংশ যার মধ্যে বাক্যগুলি পরপর থাকবে ও সমান দূরত্বে অবস্থান করবে। একটি অনুচ্ছেদ একটি বিষয় নিয়েই লিখতে হয়।
প্রবন্ধ একটি বিষয়ের বিভিন্ন বৈশিষ্ট নিয়ে লেখা হয়। একই বিষয়ের ওপর বেশ কয়েকটা অনুচ্ছেদে বিস্তৃত ভাবে লেখাকে রচনা বা প্রবন্ধ বলে। যথা সূচনা, বর্ণনা এবং উপসংহার সাধারণতঃ এই তিন অনুচ্ছেদে একটা প্রবন্ধ হয়।
২) অনুচ্ছেদ প্রবন্ধের অংশ হয় কিন্তু প্রবন্ধ অনুচ্ছেদের অংশ হয় না।
কোনও বিষয়কে যদি ছোট আকারে সামান্য কিছু কথার লিখতে হয় তখন তাকে অনুচ্ছেদ বলে।
- লেখার ধারায় ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হবে।
- অনুচ্ছেদটির আরম্ভ ও সমাপ্তি এমনভাবে লিখিত হবে যাতে স্পষ্টভাবে অনুচ্ছেদের সূচনা ও উপসংহারের বক্তব্যকে বােঝা যায়।
- চিন্তাভাবনা করে লিখে অনুচ্ছেদের সাহিত্যগুণকে রক্ষা করতে হবে।
- অবান্তর ও অপ্রাসঙ্গিক কথা লেখা চলবে না।
- অনুচ্ছেদ রচনা হবে সংক্ষিপ্ত। তাই বিষয়বস্তুর কম গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বর্জন করতে হবে।
- সাধু ও চলিত ভাষার মিশ্রণ যাতে না-ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
নিম্নে অনুচ্ছেদ রচনার নমুনা শেয়ার করা হল আশা করি সকল ছাত্র ছাত্রী বন্ধুদের অনুচ্ছেদ রচনা কী? অনুচ্ছেদ রচনা ও প্রবন্ধ রচনার মধ্যে পার্থক্য এবং অনুচ্ছেদ রচনা লেখার সঠিক নিয়ম শেয়ার করা হল।
শীতের একটি দিন অনুচ্ছেদ রচনা
শীত আমার প্রিয় ঋতু। আমাদের দেশে শীতের আগমন ক্ষণিকের অতিথির মতাে হলেও, শীতকালই আমার প্রিয় ঋতু। এই ঋতুতে দিনের এক এক সময়ে প্রকৃতির এক একরকম রূপ। তবে, ভােরের কুয়াশা কেটে যখন দিনের আলাে একটু একটু করে উকি মারে, তখন প্রকৃতির রূপই বদলে যায়। শীতের দুপরের রােদুর বড় মিঠে। সেই রােদ গায়ে মেখেই একটি ছুটির দিনে আমরা পিকনিকে গেলাম সদলবলে। বাড়ি থেকে খানিক দূরে হুগলির কাটোয়ায় সবুজদ্বীপ ছিল আমাদের গন্তব্যস্থল। নির্দিষ্ট স্থানে আগে থেকেই পিকনিকের জন্য জায়গার বন্দোবস্ত করে রাখা ছিল। মােট বারােজন ছিল আমাদের দলে। স্টেশনে নেমে খানিকটা হেঁটে ফেরিঘাট। সেখান থেকে দড়ি টানা নৌকায় দশ মিনিটের যাত্রাপথ সবুজ দ্বীপ। চারপাশে সবুজ স্থলভাগ আর মাঝখানে ছােট্টো নদীতে নৌকাসফর। নদী পেরিয়ে ডাঙায় উঠে বড়ােরা পিকনিকের আয়ােজন শুরু করল। আমরা ছােটোরা সােনালি রােদে দৌড়ে দৌড়ে খেলাধুলাে করতে লাগলাম। চারপাশের প্রকৃতি ভীষণ সুন্দর। অনেকটা সবুজ আর অনেকটা আকাশ একসঙ্গে দেখা যায়। খানিকক্ষণ পর পাত পেড়ে দুপুরের খাবার খেলাম। উপরি পাওনা ছিল নলেন গুড়ের পায়েস। খাবার পর খানিকক্ষণ ব্যাডমিন্টনও খেললাম। সবুজদ্বীপে গাছপালার পাশাপাশি ডালিয়া, সূর্যমুখী-সহ নানা ধরনের মরসুমি ফুল ফুটেছিল। সেসব দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে গেল। আমরা ফিরে চললাম। শীতের এমন একটি দিনের কথা আমি কখনাে ভুলব না।
এটিও পড়ুন – পত্র রচনা – পত্র রচনার কয়েকটি পালনীয় নির্দেশ